২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি তুমুল আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ‘চারশো পার’-এর হুঁশিয়ারি দিলেও ভেঙে ধুলোয় মিশে গিয়েছে তাদের গুমর। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি গেরুয়াশিবির। ২৪০ ছুঁতেই কালঘাম ছুটেছে তাদের। দেশের অন্যতম ‘ডবল ইঞ্জিন’ রাজ্য তথা বিজেপির শক্ত ঘাঁটি উত্তরপ্রদেশেই তাদের ভরাডুবি হয়েছে। রামমন্দির কার্যত ইস্যুই হয়ে উঠতে পারেনি রামরাজ্যে। অযোধ্যায় হেরেছে পদ্ম-পার্টি। মোদীর বারাণসী সংলগ্ন পূর্ব উত্তরপ্রদেশে বিজেপির ফল সবচেয়ে খারাপ হয়েছে। খোদ মোদীর কেন্দ্রের ব্যবধান কমেছে। মথুরা ও অযোধ্যা-লখনউ অংশেও পরিস্থিতি একই। কাশী ও ব্রজে ২৮ আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছে মাত্র ৮টি। উত্তরপ্রদেশ বিজেপির রাজ্য সভাপতি ভূপেন্দ্র চৌধুরী বুধবার রিপোর্ট পেশ করেছেন নরেন্দ্র মোদীর কাছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিজেপির থেকে সরে গিয়েছে দলিত ভোটব্যাঙ্ক। এক ধাক্কায় ৮ শতাংশ ভোট শেয়ার কমেছে। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ, অবধ অঞ্চল এবং পূর্ব উত্তরপ্রদেশ, সর্বত্র দলের ভোটব্যাঙ্ক নিম্নমুখী। যা প্রবল দুশ্চিন্তায় ফেলেছে পদ্ম-নেতৃত্বকে।
সূত্রের খবর, সরকার ও প্রশাসনের সঙ্গে দলীয় সংগঠনের সমন্বয় একেবারেই তলানিতে। মোদী এবং শাহকে দেওয়া রিপোর্টে ১৫টি গুরুতর কারণকে চিহ্নিত করা হয়েছে। রিপোর্টে সাফ বলা হয়েছে, দলিত ভোটব্যাঙ্ক ক্রমেই আস্থা হারাচ্ছে বিজেপির উপর। মায়াবতীর দলের ভোট কমেছে, সেই সিংহভাগ ভোট ইন্ডিয়া জোটের দিকে গিয়েছে। বিজেপির কাছে যে দলিত ভোট ছিল, তাও সরে গিয়েছে। উত্তরপ্রদেশে দল বনাম সরকার, সম্পূর্ণ দুই ভাগে বিভাজিত হয়ে গিয়েছে বিজেপি। একদিকে যোগী আদিত্যনাথ এবং কিছু বিধায়ক, যাদের সিংহভাগ ঠাকুর। অন্যদিকে অনগ্রসর সম্প্রদায়ের বিধায়কদল। যাদের সঙ্গে উচ্চবর্ণের একাংশ আছে। ঠাকুর সম্প্রদায়ের বাড়বাড়ন্তে ব্রাহ্মণরা যোগী আদিত্যনাথের উপর বেজায় খাপ্পা। আগামী ১০ বিধানসভা আসনের উপ নির্বাচনের পরই উত্তরপ্রদেশে বিজেপি এবং সরকারে রদবদল হবে। আসন্ন উপনির্বাচনের ফলাফলের উপর নির্ভর করছে যোগীর ভবিষ্যৎ। আবার বিজেপি সভাপতি ভূপেন্দ্র চৌধুরীও সরে যেতে পারেন। দিল্লী ও লখনউতে বৈঠকের পর বৈঠক চলছে উত্তরপ্রদেশে বিরোধী মুখ অখিলেশ যাদব। যোগী সরকারের প্রতি তিনিও আক্রমণ বাড়াচ্ছেন। বৃহস্পতিবার তিনি বলেছেন, “বর্ষাকালীন অফার এসেছে। একশো আনুন সরকার গডুন।” অর্থাৎ, যোগীর বিরোধী শিবিরকে বিদ্রোহের প্রস্তাব দিচ্ছেন তিনি, এমনটাই মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা।