তৃতীয়বার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার পরই বাংলাকে আরও শিল্পবান্ধব করে তোলার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইমতোই নানান তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার। এবার খাদান-শ্রমিকদের চিকিৎসায় এগিয়ে এল রাজ্য। গত বছরের এপ্রিলের পর ফের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত পাথর খাদান শ্রমিকদের জন্য শিবির তৈরি করা হল। এই শ্বাসকষ্টজনিত রোগের সিম্পটোম্যাটিক চিকিৎসা হয়। সেই লক্ষ্যে একশো রোগীর মধ্যে ষাটজনকে শনাক্ত করা হয়। রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শোভন দে বলেন, “এটা আমাদের দ্বিতীয় ক্যাম্প। এরপর তৃতীয় এবং চতুর্থ শিবির পরপর চলতেই থাকবে। এই শনাক্তকরণের মাধ্যমে রাজ্য অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে চিকিৎসা থেকে পুনর্বাসনের জন্য মানবিক প্রকল্প করেছে।” রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এমএসভিপি পলাশ দাসের মতে, রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের চেস্ট স্পেশালিস্ট নিরঞ্জন সিট, ডেপুটি সিও এমএইচ অমিতাভ সাহা, কলকাতার স্বনামধন্য চিকিৎসক-সহ অনেকেই ছিলেন মেডিক্যাল বোর্ডে।
উল্লেখ্য, রোগী শনাক্তকরণের পর এককালীন ২ লক্ষ টাকা দেয় রাজ্য সরকার। উল্লেখ্য, রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পর বীরভূমের পাথর খাদান শিল্পাঞ্চলে সিলিকোসিস সংক্রমণ রোধে রাজ্য সরকার দীর্ঘমেয়াদী মানবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। বাংলা-সংলগ্ন ঝাড়খণ্ডে প্রচুর পাথর খাদানে শিকারিপাড়া এলাকার বাংলার শ্রমিকরা কাজ করেন। সেই ক্রাশারগুলোয় জল স্প্রে করে ধুলো নামাবার প্রতিরোধক ব্যবস্থা না থাকায় বাংলার শ্রমিকরা সিলিকোসিস রোগে ফুসফুসের সংক্রমণে আক্রান্ত হন। তাঁদের স্বাস্থ্য নিয়ে ঝাড়খণ্ড সরকার কোনও পরিষেবা না দেওয়ায় শ্রমিকরা বাংলার মুখাপেক্ষী। বাংলার মুরারইয়ের রাজগ্রাম ব্লকে পাথর খাদানে বাংলা ও ঝাড়খণ্ডের যে শ্রমিকরা কাজ করেন তাঁরা মুরারই ব্লকে আয়োজিত এই ক্যাম্পে রোগের টেস্ট ও চিকিৎসাজনিত পরিষেবা পেয়ে থাকেন। এব্যাপারে রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শোভন দে জানান, এই রোগের নিরাময়ের ব্যবস্থা হয়ে থাকে বিভিন্ন শিবিরের মাধ্যমে। এখানে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং সিলিকোসিস রোগনির্ণয়ের পরিকাঠামো আছে। বাম আমলে রামপুরহাটের ময়ূরেশ্বর ব্লকের নিরসা, বেলডাঙা গ্রামে মানুষের গড় আয়ু ৩০ থেকে ৪০। অধিকাংশ পুরুষ ২৮ থেকে ৩০ বছর বয়সে মারা যেতেন। এর আগে দীর্ঘ বাম আমলে এই রোগের কোনও চিকিৎসাই হত না। ব্রঙ্কাইটিস, শরীরে খিচুনি, রক্তবমি, হাঁপানির মতো জটিল রোগে ভুগতেন এলাকার বেশির ভাগ মানুষই। ক্রাশারের পাথরের ধুলোয় এই রোগের শিকার হতেন তাঁরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার স্বাস্থ্যব্যবস্থা ঢেলে সাজিয়েছে। এই রোগের বিষয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রয়োজনীয় বন্দোবস্ত করেছে রাজ্য।