বড়সড় প্রশ্নের মুখে পড়ল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। মোদী-জমানায় বারবার প্রকাশ্যে এসেছে দেশের কর্মসংস্থানের বেহাল পরিস্থিতি। ফুটে উঠেছে বেকারত্বের চিত্র। তবে যতটা প্রচার করা হচ্ছে, মোটেই অত বেকারত্ব নেই দেশে, এমনটাই মনে করছে মোদী সরকার! আর সেই দাবিকেই সঠিক প্রমাণ করতে নেমে পড়েছে আরবিআই। মোদী জমানায় কর্মসংস্থানের ‘ইতিবাচক’ পরিসংখ্যান তুলে ধরে তারা প্রকাশ করেছে নয়া রিপোর্ট। স্পষ্টতই জানানো হয়েছে, কৃষি, পরিষেবা, উৎপাদন অথবা নির্মাণ, সবক্ষেত্র মিলিয়ে মাত্র এক বছরের মধ্যে নাকি চার কোটিরও বেশি কর্মসংস্থান হয়েছে। এই প্রথম এমন পরিসংখ্যান দিয়ে রিপোর্ট পেশ করল আরবিআই। আর কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের আচমকা এই মোদীর গুণগানেই বিরোধী থেকে অর্থনীতিবিদরা কার্যত হতবাক। বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, এত কর্মসংস্থান হলে দেশে কেন তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে না? সরকারি পরিসংখ্যানই বলছে, গত অর্থবছরে ক্রয় বৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ৪। এ ছাড়া আরবিআইয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯-২০ সালে ৪ দশমিক ২ কোটি এবং ২০২০-২১ সালে ৩ দশমিক ১ কোটি নতুন কর্মসংস্থান হয়েছিল। অথচ তখন ছিল করোনা অতিমারীর পর্যায়। বিপুলসংখ্যক মানুষ তখন কাজ হারিয়েছিলেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধী দলগুলো দেশের ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব নিয়ে সরব হয়েছিল। তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে মোদী সরকার কাজ শুরুর পর বেকারত্ব নিয়ে অস্বস্তি আরও বেড়েছে। সম্প্রতি সিটি গ্রুপের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭ শতাংশ আর্থিক বৃদ্ধি হলেও যথেষ্ট কর্মসংস্থান হয়নি ভারতে।
উল্লেখ্য, দেশের তরুণদের কর্মসংস্থানের অবস্থা আরও হতশ্রী। সম্প্রতি অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু বলেছেন, ভারতে তরুণদের বেকারত্বের হার বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। সিএমআইইর পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত মে মাসে ভারতে তরুণদের বেকারত্বের হার ছিল ৪৫ দশমিক ৪ শতাংশ। এ প্রসঙ্গে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে কৌশিক বসু লেখেন, ভারতে তরুণদের এই বেকারত্ব বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে গেছে। এটা অর্থনীতির গভীর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।।দেশে নতুন বিনিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। গত এপ্রিল-জুনে শিল্প প্রতিষ্ঠানের ঘোষিত নতুন বিনিয়োগ মাত্র ৪৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকায় নেমে এসেছে, ২০ বছরের মধ্যে যা সর্বনিম্ন। মাঝারি শিল্পগুলোর সংগঠন দ্য কনফেডারেশন অব মিডিয়াম ইন্ডাস্ট্রিজ ইন ইন্ডিয়া বা সিএমআইইর পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, গত বছর ওই তিন মাসে ৭ দশমিক ৯ লাখ কোটি টাকার করপোরেট বিনিয়োগ ঘোষণা করা হয়েছিল। এ বছরের জানুয়ারি-মার্চেও তা ছিল ১২ দশমিক ৩৫ লাখ কোটি টাকা। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৪ ও ২০১৯ সালের ভোটের সময় অনেক বেশি বিনিয়োগ ঘোষিত হয়েছে। মোদী সরকারকে একহাত নিতে ছাড়েননি বিরোধী দলের নেতারা। “নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপি লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থাও কমেছে, মোদী সরকার এখন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি”, স্পষ্ট বক্তব্য তাঁদের।