প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যে বরাবরের মতো এবারও জরুরি অবস্থার বর্ষপূর্তিতে এ নিয়ে সরব হবেন এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধীকে আক্রমণ শানাবেন তা জানা কথাই ছিল। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে ২৫ জুন দিল্লির অদূরে গাজিয়াবাদের একটি অনুষ্ঠানে জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে সরব হন দেশের উপ রাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকর। পরদিন লোকসভায় দ্বিতীয়বার স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার পর সেই জরুরি অবস্থা নিয়েই প্রস্তাব পাঠ করে বিতর্কে জড়িয়েছেন স্বয়ং ওম বিড়লাও। প্রস্তাবটি শাসক জোটের পরিবর্তে স্বয়ং স্পিকার পাঠ করায় সংবিধান এবং পরিষদীয় রাজনীতির বিশেষজ্ঞদেরও অনেকেই বিস্মিত। সেদিনের ভাষণে পুরোদস্তুর দলীয় নেতার ভাষায় জরুরি অবস্থা এবং ইন্দিরা গান্ধীর মুণ্ডপাত করেন স্পিকার। সবশেষে ইমার্জেন্সির সময়ে নিহতদের স্মরণে দু-মিনিট নীরবতা পালন করেন।
পরদিন তালিকায় যুক্ত হয় রাষ্ট্রপতির নাম। বৃহস্পতিবার চলতি সংসদে তাঁর প্রথম ভাষণে স্বয়ং রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর ভাষণেও ছিল জরুরি অবস্থার নিন্দা। লোকসভার স্পিকার জরুরি অবস্থা নিয়ে নিজের উদ্যোগে সংসদে প্রস্তাব পাশ করায় তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি মন্তব্য করেন, ‘জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে মুখ খোলায় স্পিকারকে নিয়ে আমি গর্ব অনুভব করি।’ মনে করা হচ্ছে, রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর ধন্যবাদ জ্ঞাপন প্রস্তাবের ওপর বিতর্কের জবাবে প্রধানমন্ত্রী দ্রৌপদীরও প্রশংসা করবেন জরুরি অবস্থার কথা উল্লেখ করায়। শুধু তাই নয়। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, আগামী বছর জরুরি অবস্থার ৫০ বছরে পদার্পণকে সামনে রেখে গেরুয়া শিবির আক্রমণ তীব্র করবে তাতেও কোনও সন্দেহ নেই। রাজনৈতিক মহলে অনেকেই বিস্মিত শাসক দলে রণকৌশলে দুই সাংবিধানিক প্রধানও নিজেদের জড়াচ্ছেন দেখে।
প্রথা মত, কেন্দ্রীয় সরকারই রাষ্ট্রপতির ভাষণ লিখে দেয়। তবে এর অর্থ এটা নয় যে রাষ্ট্রপতি চাইলে তাতে পরিবর্তন, পরিমার্জন করাতে পারেন না। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি কেআর নারায়ণন, প্রণব মুখোপাধ্যায় একাধিকবার সেই পথে হেঁটেছেন। ফলে ধরেই নেওয়া যায়, জরুরি অবস্থার প্রসঙ্গ তুলে কংগ্রেসকে নিশানা করার যে কৌশল শাসক দল নিয়েছে রাষ্ট্রপতি ভবন তাতে আপত্তি করেনি। ফলে দ্রৌপদী সব উত্তরসূরি, এমনকী বিজেপির রামনাথ কোবিন্দকেও ছাপিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কিছু ক্ষেত্রে তা বিরোধীদের পাশাপাশি সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞদেরও বিস্মিত করেছে। রামনাথ বা তাঁরও আগে বিজেপি জমানায় রাষ্ট্রপতি হওয়া এপিজে আবদুল কালাম কখনও বিরোধী দলকে পুরনো ঘটনার উল্লেখ করে অস্বস্তিতে ফেলেননি। কারণ, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান, তিনি কোনও দলের প্রতি দায়বদ্ধ নয়।