বছর ঘোরেনি এখনও। ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের মন থেকে মুছে যায়নি ২০২৩ সালের ওডিআই বিশ্বকাপে ফাইনালে হারের যন্ত্রণা। তার প্রায় সাড়ে সাত মাস পর ফের ফাইনালে উঠলেন রোহিতরা। বৃহস্পতিবার সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছল টিম ইন্ডিয়া। শনিবার ফাইনাল। সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে ভারত। এদিন টসের আগেই ধারাভাষ্যকারেরা বলছিলেন, কোনও অধিনায়কই জিততে চাইবেন না। বৃষ্টির কারণে দীর্ঘ সময় উইকেট ঢাকা থাকায় পিচ কেমন আচরণ করবে, তা কেউই বুঝতে পারছিলেন না। তবে নিশ্চিতভাবেই প্রথমে ব্যাট করা দলের সমস্যা বেশি হত। টসে হেরে রোহিত শর্মাদের ব্যাট করতে হল। যদিও রোহিত জানালেন, তাঁরা আগে ব্যাট করতেই চেয়েছিলেন। প্রথম দু’ওভারে দু’টি চার মারার পর রোহিত বেশ চাপ তৈরি করেছিলেন ইংরেজ বোলারদের উপর। তৃতীয় ওভারে রিসি টপলিকে ছয় মারে দেন বিরাট কোহলিও। কিন্তু চতুর্থ বলেই টপলির বলের লাইন পুরোপুরি মিস করে বোল্ড হলেন তিনি। তিনে নামা ঋষভ পন্থ স্যাম কারেনের তৃতীয় বলেই আড়াআড়ি শট খেলতে গিয়ে মিড-অনে ক্যাচ তুলে দেন জনি বেয়ারস্টোর হাতে। সপ্তম ওভার থেকেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছিল। অষ্টম ওভার শেষ হওয়ার পরেই ঝেঁপে বৃষ্টি নামে গায়ানায়। প্রায় আধ ঘণ্টা মতো বৃষ্টি চলার পর আবার এমন কড়া রোদ ওঠে যে দেখে মনে হচ্ছিল আগে বৃষ্টিই হয়নি। ৭৫ মিনিট বন্ধ থাকার পর শুরু হয় ম্যাচ। সূর্যের সঙ্গে জুটি বেঁধে রোহিত খেলছিলেন ভালই। দু’জনের জুটিতে উঠে যায় ৫০ রান। রোহিত নিজেও অর্ধশতরান পূরণ করেন। কারেনের একটি ওভারে দু’টি ছয় এবং একটি চার মেরে ১৯ রান নেন সূর্যও। পরের ওভারেই উইকেট পুরো ছেড়ে দিয়ে আড়াআড়ি খেলতে যান রোহিত। আদিল রশিদের গুগলিতে পরাস্ত হন তিনি। বল এসে মিডল স্টাম্প ভেঙে দেয়। কিছুক্ষণ পরে ফেরেন সূর্যও। জফ্রা আর্চারের স্লোয়ার বলে আউট হন ৪৭ রানে।
এরপর মাঝের দিকে নেমে চালিয়ে খেলছিলেন হার্দিক। জর্ডানকে জোড়া ছক্কা মারেন ১৮ তম ওভারে। পরের বলেই হার্দিক একই শট খেলেন। লং-অফে ধরা পড়েন কারেনের হাতে। পরের বলেই শিবম দুবে ফেরেন শূন্য রানে। প্রথম বলেই খোঁচা দেন উইকেটকিপার বাটলারের হাতে। শেষ দিকে রবীন্দ্র জাদেজা এবং অক্ষর প্যাটেলের সৌজন্যে ৭ উইকেটে ১৭১ রানে তোলে ভারত। ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের সময় চিন্তা ছিল তাঁদের দুই ওপেনারকে নিয়ে। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুই ওপেনারই হারিয়ে দিয়েছিলেন ভারতকে। তাঁদের একজন, জস বাটলার এদিনও দলে ছিলেন। ইনিংসের শুরুটাও করেছিলেন আগ্রাসী ভঙ্গিতেই। তৃতীয় ওভারে আরশদীপ সিংহকে তিনটি চার মেরে ইংল্যান্ডের মনোভাব বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। চতুর্থ ওভারের প্রথম বলেই বাটলারকে সাজঘরে ফেরালেন অক্ষর। প্রথম বলেই রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে পন্থের হাতে ক্যাচ দিলেন বাটলার। পরের ওভারে বুমরা তুলে নিলেন সল্টকে। ষষ্ঠ ওভারে সেই অক্ষরই তুলে নেন জনি বেয়ারস্টো। পাওয়ার প্লে-র মধ্যে তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ইংল্যান্ড। অষ্টম ওভারের প্রথম বলে অক্ষর তুলে নেন মইন আলির উইকেট। নবম ওভারের প্রথম বলে স্যাম কারেনকে আউট করেন কুলদীপ। ৪৯ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে তখন ইংরেজদের অবস্থা শোচনীয়। ইংরেজদের একমাত্র আশা বলতে ছিলেন হ্যারি ব্রুক। ১১তম ওভারের চতুর্থ বলে কুলদীপ যাদব তাঁকে তুলে নিতেই ম্যাচের রাশ পুরোপুরি চলে যায় ভারতের হাতে। বাকি ব্যাটারদের সাজঘরে ফেরাতে বেশি কষ্ট করতে হয়নি তাদের। ভারতের হয়ে অক্ষরের পাশাপাশি তিনটি উইকেট নিলেন কুলদীপ। দু’টি উইকেট যশপ্রীত বুমরার। ম্যাচের সেরা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে অক্ষর প্যাটেলকে।