স্বাধীনতার পর থেকে প্রতিবারই নতুন সংসদ গঠনের সময় সর্বসম্মতভাবে স্পিকার নির্বাচিত করা হয়েছে। রীতি হল প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী শিবিরের প্রধান নেতা নতুন স্পিকারকে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে আসেন। তারপর সব দলের একজন করে সদস্য নতুন স্পিকারকে স্বাগত জানিয়ে ভাষণ দেন।
স্বাধীনতার পরে না হলেও আগে একবার সংসদে স্পিকার নির্বাচনে ভোটাভুটির নজির রয়েছে। ব্রিটিশ ভারতে ১৯২৫ সালে তখনকার ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের নিম্ন কক্ষ অর্থাৎ সেন্ট্রাল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির স্পিকার নির্বাচনে স্বরাজ পার্টির বিট্টল ভাই জে প্যাটেল মাত্র দুই ভোটে টি রঙ্গচারিয়ারকে পরাজিত করেছিলেন। এছাড়া ভারতে স্বাধীনতার আগে ও পরে স্পিকার নির্বাচনে ভোটাভুটির নজির নেই।
ভারতের সংসদীয় ব্যবস্থা ব্রিটেনের আদলে তৈরি হলেও স্পিকার নির্বাচনে সে দেশের রীতি এখানে পুরোপুরি অনুসরণ করা হয় না। ব্রিটেনে শুধু সর্বসম্মতিতে স্পিকার নির্বাচন করা হয় তাই-ই শুধু নয়, তাঁকে কখনও সরানো হয় না, যদি না তিনি নিজে থেকে সরে যান। আর স্পিকার পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর সক্রিয় রাজনীতিতেও থাকা যায় না। স্পিকার হওয়ার সময়ই তাঁকে দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে দিতে হয়।
ভারতে স্পিকার পদ নিয়ে ভিন্ন পথ অনুসরণ করা হয়। অতীতে তিনজন প্রাক্তন স্পিকার গুরদয়াল সিং ধিঁলো, শিবরাজ পাতিল এবং বলরাম জাখর পরবর্তীকালে কেন্দ্রে মন্ত্রী হয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে এন সঞ্জীব রেড্ডি দু’বার লোকসভার স্পিকার ছিলেন। দু’বার তিনি স্পিকার পদে ইস্তফা দিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। একবার বিজয়ী হন।
আবার সিপিএম নেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় অন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। আমেরিকার সঙ্গে পরমাণু চুক্তির বিরোধিতা করে তাঁর দল ইউপিএ সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছিল ২০০৮-এর জুলাইয়ে। এরপর সংসদে ভোটাভুটিতে তাঁকে দলের পক্ষে ভোট দেওয়ার নিদান দেয়। সোমনাথবাবু দলীয় হুইপ না মেনে জানিয়ে দিয়েছিলেন, স্পিকার কোনও দলের হয়ে কাজ করতে পারেন না। পার্টি তাঁকে বহিষ্কার করে।
লোকসভার স্পিকার পদে বরাবর বিরোধীদের সম্মতিতে শাসক দল বা জোটের কেউ বসলেও একবার উল্টো হয়েছিল। সেইবার বিরোধী দলের সাংসদ স্পিকার হয়েছিলেন। সালটা ছিল ১৯৯৬। লোকসভা নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসনে বিজয়ী বিজেপির নেতা অটল বিহারী বাজপেয়ীকে রাষ্ট্রপতি শঙ্কর দয়াল শর্মা প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিতে আহ্বান জানান।
সংখ্যালঘু সরকার হওয়ায় তাঁকে সংসদে গরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে বলেছিলেন রাষ্ট্রপতি। সংখ্যালঘু দল বা জোটের ক্ষেত্রে এটাই নিয়ম। বাজপেয়ীর বিরুদ্ধে সেiবার স্পিকার নির্বাচনের আগেই বিরোধীরা অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করে। বাজপেয়ী সিদ্ধান্ত করেছিলেন আগে অনাস্থা প্রস্তাবের মোকাবিলা করবেন, তারপর আস্থা ভোটের দিনক্ষণ ঠিক করবেন।
সংসদে বিরোধীদের মোকাবিলা করার আগে স্পিকার মনোনয়নের পর্ব এলে দেখা যায় বিরোধীরা পিএ সাংমাকে ওই পদের জন্য মনোনীত করেছে। কিন্তু বাজপেয়ী-আডবানিরা সংসদীয় রীতি রক্ষা ও কৌশলগত কারণে সেবার বিজেপির কাউকে স্পিকার পদে প্রার্থী করেননি। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিরোধী দলের সাংসদ পিএ সাংমা স্পিকার নির্বাচিত হন। এই ঘটনাও ভারতের সংসদীয় ইতিহাসে একবারই হয়েছে।