গতবছর আমেরিকার বাসিন্দা তথা খলিস্তানি নেতা গুরুপতবন্ত সিং পান্নুনকে খুনের ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ তুলে এক ভারতীয় নাগরিকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেছিল মার্কিন প্রশাসন। যা নিয়ে সম্প্রতি আলোড়ন তৈরি হয়েছে ভারত এবং আমেরিকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে। জানা গিয়েছে, এই খুনের চক্রান্তের শিকড় খুঁজতে বদ্ধপরিকর আমেরিকা। গোটা পরিকল্পনার সঙ্গে ভারত জড়িয়ে আছে বলে তাদের দাবি। ইতিমধ্যে সে দেশের গোয়েন্দারা তদন্তও শুরু করে দিয়েছেন ভারত-যোগ প্রসঙ্গে।
প্রসঙ্গত, পন্নুনের ঘটনা কানাডার হরদীপ সিংহ নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে অনেকটা সামঞ্জস্যপূর্ণ। নিজ্জরকে ২০২৩ সালে খুন করা হয় কানাডার মাটিতে। তিনিও পন্নুনের মতোই খলিস্তানপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা। নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে কানাডার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এই খুনের নেপথ্যে ভারতের গুপ্তচর সংস্থার হাত রয়েছে বলে প্রকাশ্যে দাবি করেছিলেন। যা উড়িয়ে দেয় নয়াদিল্লি। তারা জানায়, ট্রুডো রাজনৈতিক ফয়দা তোলার জন্য ভারতের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ করছেন।
পন্নুন এবং নিজ্জর— উভয়েই ভারতে নিষিদ্ধ। তাঁদের সংগঠনও নিষিদ্ধ। পন্নুন খুনের চক্রান্তের মামলায় নিখিল গুপ্ত নামের এক ভারতীয়কে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি এখন আমেরিকার হাতে। যদিও তাঁকে আইনি প্রক্রিয়ায় সাহায্য করছে ভারত। চেক প্রজাতন্ত্রের জেলে বন্দি ছিলেন নিখিল। আমেরিকার অনুরোধে চেক প্রশাসন তাঁকে তুলে দিয়েছে ওয়াশিংটনের হাতে। সেখানেই আপাতত বন্দি নিখিল। অভিযোগ, তিনি পন্নুন হত্যার চেষ্টার চক্রান্তের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন।
পন্নুন-চক্রান্তের শিকড় খুঁজতে গিয়ে আমেরিকার তদন্তকারীরা যে চার্জশিট প্রকাশ করেছেন, তাতে বার বার উঠে এসেছে রহস্যময় এক নাম— সিসি-১। তাঁকে ভারত সরকারের কোনও এক উচ্চপদস্থ কর্তা বলে ব্যাখ্যা করেছেন তদন্তকারীরা। কিন্তু চার্জশিটে কোথাও সরাসরি তাঁর নাম নেওয়া হয়নি। তদন্তকারীদের দাবি, পন্নুন-চক্রান্তের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড এই সিসি-১। তাঁর নির্দেশেই নিখিল আমেরিকার মাটিতে দাঁড়িয়ে পন্নুনকে খুন করার পরিকল্পনা করেছিলেন।
বক্তব্যের প্রমাণস্বরূপ চার্জশিটে একাধিক বিষয় দেখিয়েছে আমেরিকার তদন্তকারী সংস্থা। সিসি-১-এর সঙ্গে নিখিলের নিয়মিত কথোপকথন, গোপনীয়তা রক্ষার চেষ্টা সংক্রান্ত একাধিক নথি প্রকাশ করা হয়েছে। এই ভিডিয়ো দেখিয়ে আমেরিকা দাবি করছে যে, নিজ্জর খুনের সঙ্গে ভারতের যোগ সংক্রান্ত নথিও তাদের হাতে আছে। যদিও পন্নুন খুনের চক্রান্তের সঙ্গে কোনও রকম যোগ থাকার কথা প্রথম থেকেই অস্বীকার করছে নয়াদিল্লি। যে হেতু বিষয়টি স্পর্শকাতর এবং এর সঙ্গে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জড়িয়ে আছে, তাই উভয় ক্ষেত্রেই সাবধানে পা ফেলা হচ্ছে।