সোমবার ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। ২০২৩ সালের ২ জুন উড়িষ্যার বালেশ্বরের বাহানগায় করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার পরেই একাধিক প্রশ্ন উঠেছিল। কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলে। তদন্ত করে সিবিআইও। উঠে আসে রেলকর্মীর গাফিলতি এবং সিগন্যাল বিভ্রাটের কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছিল। ঠিক এক বছর পর সেই একই প্রশ্ন আবারও মাথাচাড়া দিল। কীভাবে ঘটল এত বড় দুর্ঘটনা? যান্ত্রিক গোলযোগ না কি সিগন্যাল বিভ্রাট? প্রশ্নের মুখে পড়েছে রেলের যাত্রী নিরাপত্তাও। ভারতীয় রেল ঘটা করে কবচ প্রযুক্তির প্রচার চালাচ্ছে। একই লাইনে এসে পড়া দু’টি ট্রেনের মধ্যে ধাক্কা এড়াতে যা ব্যবহার করা হয়। অভিযোগ, রেল লাইনে কবচ প্রযুক্তি ছিল না। গালভরা বিজ্ঞাপন প্রচারিত হলেও বাস্তবে রেল পরিকাঠামো ও যাত্রী সুরক্ষা তলানিতেই।
প্রশ্ন উঠছে, সুরক্ষা তহবিলের এক লক্ষ কোটি টাকা দিয়ে কী হল? ২০১৭ সালে রেলমন্ত্রক ঘোষণা করেছিল, ১ লক্ষ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল তৈরি হচ্ছে। পাঁচ বছরের মধ্যে সেই তহবিল নাকি রেলসুরক্ষার আমূল বদলে ফেলবে, এমনই দাবি করা হয়েছিল। তহবিলের নাম ছিল রাষ্ট্রীয় রেল সংরক্ষণ কোষ। তহবিল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল ক্যাগ। ২০২২ সালের মধ্যে কাজ পূর্ণ হওয়ার ছিল। ২০২৩ সালের জুনে বালেশ্বরে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রায় ৩০০ মানুষের মৃত্যু হয়। এবার কাঞ্চনজঙ্ঘা। দুর্ঘটনা প্রবণতা বিন্দুমাত্র কমেনি! এখানেই প্রশ্ন ১ লক্ষ কোটি টাকা দিয়ে কী করা হয়েছে? তহবিল নির্মাণের পরিকল্পনা কি অথৈ জলে? রেলমন্ত্রক বছরে ২০ হাজার কোটি টাকা করে ব্যয় করবে সুরক্ষার বিষয়ে। রেলওয়ে ক্রসিং, রেল লাইনের সংরক্ষণ, নতুন কামরা নির্মাণ, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার, ইঞ্জিনের আধুনিকীকরণ, লোকো পাইলট, সহকারী লোকো পাইলট, গার্ডের প্রশিক্ষণ ইত্যাদি করার কথা ছিল ওই টাকায়।
ক্যাগ রিপোর্টে বলছে, পরপর তিন বছরই রেল নিজের প্রদেয় ৫ হাজার কোটি টাকা তহবিলে দেয়নি। গড়ে ২ থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা এই তহবিল থেকে নিয়ে অন্য খাতে ব্যয় করা হয়েছে। রেলের রিপোর্টেই দেখা যাচ্ছে, শেষ ৬ বছর ধরে রেলমন্ত্রক পুরনো রেললাইনের সংস্কার, মেরামতি, আধুনিকীকরণে বেশি জোর দেওয়ার বদলে নতুন রেলপথ ঘোষণায় বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত নতুন নতুন রেলপথ নির্মাণের জন্য রেল ব্যয় করেছে ৮০ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। কিন্তু পুরনো রেললাইনকে নিরাপদ রাখার কাজে ৫৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে মাত্র। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন প্রথম স্বয়ংক্রিয় অ্যান্টি কলিশন সিস্টেম চালু করেন। ভারতীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এই কবচ রেল ট্র্যাকে বসানো থাকে। দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, প্রচুর ট্রেন বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন সময় ট্রেন দুর্ঘটনার পরও কবচ চালু করার ব্যাপারে রেলমন্ত্রক কিছুই করেনি।