শেষমেশ অপরাধের কিনারা করতে সক্ষম হল লালবাজা। ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ তথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নম্বর ক্লোন করে ফোনে জমি সংক্রান্ত কথাবার্তা চালানোর অভিযোগ দিল্লী থেকে ধৃত রূপান্তরকামী-সহ ২। অভিযুক্ত রূপান্তরকামীকে দিল্লি থেকে কলকাতায় নিয়ে আসতে গিয়ে কার্যত নাকানিচোবানি খেতে হল লালবাজারের গুন্ডাদমন শাখার আধিকারিকদের। দুদিন ধরে একের পর এক বিমান ছেড়ে অবশেষে দিল্লী থেকে গাড়িতে করে তাঁকে কলকাতায় নিয়ে আসা হল। ধৃত রূপান্তরকামী তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নম্বর ক্লোন করে ফোন করেছিলেন রায়গঞ্জ পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যানকে। গত শুক্রবার রায়গঞ্জ পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যানের কাছে একটি ফোন আসে। ফোনের ডিসপ্লে-তে নম্বরটি অভিষেকের নাম দেখাচ্ছিল।
স্বাভাবিকভাবে ভাইস চেয়ারম্যান ফোনটি ধরে কথা বলেন। ফোনের ওপারের ব্যক্তি অভিষেকের নাম নিয়ে বলেন, সোফিয়া চক্রবর্তী নামে একজনের জমি নিয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে, সেটি যেন মিটিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ভাইস চেয়ারম্যানের সন্দেহ হয় ব্যক্তির গলায় স্বর নিয়ে। তখন তিনি ফোন করে ক্যামাক স্ট্রিটে অভিষেকের অফিসে বিষয়টি জানান। এর পর অভিষেকের অফিস থেকে গত শনিবারশেক্সপিয়ার সরণি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। এর পর তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ফোনটি দিল্লি থেকে করা হয়েছিল। তা জেনে দিল্লি রওনা দেন লালবাজারের গুন্ডাদমন শাখার একটি টিম। সেখানে গিয়ে সোফিয়ার খোঁজ করায় তাঁরা জানতে পারেন, আদতে সোফিয়া একজন রূপান্তরকামী। শুভজিৎ চক্রবর্তী তাঁর আসল নাম।
উল্লেখ্য, উক্ত রূপান্তরকামীকে গ্রেফতার করতে গিয়ে দিল্লীতে কার্যত নাজেহাল হতে হয় কলকাতা পুলিশকে। এমনকি দিল্লি পুলিশও প্রথমদিকে কলকাতা পুলিশকে কোনও সহযোগিতা করেননি বলে অভিযোগ। লালবাজার সূত্রে খবর, রবিবার দিল্লীর ময়দানগরি থানা এলাকা থেকে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়। ট্রানজিট রিম্যান্ডে তাঁকে বিমানে করে নিয়ে আসার কথা ছিল। গত সোমবার রাতে সেজন্য দিল্লি থেকে কলকাতার বিমানের টিকিটও কাটা হয়। কিন্তু রাতে দিল্লি বিমানবন্দরে আসার পর রূপান্তরকামী ‘নাটক’ শুরু করেন। পরনের জামাকাপড় খুলে ফেলেন। বিমান সংস্থার কর্মী ও নিরাপত্তারক্ষীদেরও গালিগালাজ করতে থাকেন। পরিস্থিতি এমন হয় যে রাতের বিমানে তাঁকে তোলা যায়নি। পরেদিন সকালের বিমানে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এভাবে পরদিনও একের পর এক বিমান ছেড়ে দিতে হয়। এভাবে দুদিন কাটে। রূপান্তরকামী কাণ্ড দেখে পরিস্থিতি এমন হয় যে বিমান সংস্থার কর্মীরাই আর তাঁদের বিমানে নিয়ে যেতে রাজি হননি। অগত্যায় দিল্লী থেকে গাড়িতে বসিয়ে অভিযুক্তকে নিয়ে আসা হয়। পুলিশ তদন্তে জানতে পারে, ওই রূপান্তরকামী অভিষেক চৌধুরী নামে তথ্য প্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত এক বন্ধুকে দিয়ে অভিষেকের নম্বরটি ক্লোন করিয়েছিলেন। ওই বন্ধুও পুলিশের জালে ধরা পড়েছে। তবে ওই নম্বরটি অভিষেকের ব্যক্তিগত নম্বর ছিল না। সেটি অফিসের জন্য ব্যবহার করা হত। অভিযুক্তের দাবি, তাঁর বাবা পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে। ওই সম্পত্তির ভাগ পেতেই অভিষেকের নম্বর ক্লোন করে ফোন করেছিলেন। এদিন ধৃত দুজনকে আদালতে তোলা হয়। বিচারক আগামী ২১শে জুন পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।