বিজেপি বেড়েছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের ছায়ায়। বারেবারেই আরএসএসকে ভারতীয় জনতা পার্টির মতাদর্শিক সংগঠন বলা হয়ে এসেছে। তবে গত দশ বছরে, আরও স্পষ্ট করতে বলতে গেলে মোদি জমানায় বিজেপি যেভাবে তেড়েফুঁড়ে উঠেছে, যেভাবে সর্বময় হয়ে ওঠার প্রয়াস করেছে তাতে আরএসএসের সঙ্গে তার দূরত্ব বেড়েছে।
বিজেপি নিজেই এতটা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠেছে যে আরএসএসের আঙুল ধরে চলার মতো প্রয়োজন তার আর নেই। দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন ইস্যুতে দুই সংগঠনের মতপার্থক্য প্রকাশ্যে এসেছে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ এবং ভারতীয় জনতা পার্টির মধ্যে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক শেষ হওয়া এখন শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। খোদ বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডাই বলেছেন, বিজেপি এখন আরএসএসের ছায়া থেকে বেরিয়ে স্বাধীন হয়ে উঠেছে। পিতৃপুরুষের হাত ধরে চলার আর কোনও দরকার নেই। খোদ বিজেপি সভাপতি যখন এত বড় কথা বলছেন, তাও ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ঠিক মাঝামাঝি, তখন স্বাভাবিক প্রশ্ন ওঠে একা একা তরী পার সম্ভব?
গত দশ বছরে মোদিই সঙ্ঘ পরিবারের মাধ্যাকর্ষণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছেন। সবতাই যেন তাঁকে আবর্ত করেই। আর এই বিষয়টিই সঙ্ঘের নীতির বিরুদ্ধে। সঙ্ঘ বলে, কেউ সংগঠনের ঊর্ধ্বে নয়, এমনকী আরএসএস প্রধানও নন। অথচ মোদির কর্তৃত্ববাদী চরিত্র সঙ্ঘের নীতির তোয়াক্কাই করে না। এটাই মোদির সঙ্গে আরএসএসের মূল অস্বস্তির কারণ।
তবে আরএসএসের আদর্শেও দ্বন্দ্ব রয়েছে। আরএসএস মতাদর্শগতভাবে কিন্তু হিতৈষী একনায়কত্বের ধারণাকেই প্রচার করে। কিন্তু কিছুতেই বৃহত্তর সঙ্ঘ পরিবার সংস্থার মধ্যে কারও একনায়ক হওয়া মেনে নিতে পারে না। সঙ্ঘ বিশ্বাস করে, আরএসএস কোনও ব্যক্তির অধীন হয়ে গেলেই সঙ্ঘের মৃত্যু। সরকার আসবে-যাবে, আরএসএস প্রধানও আসবে-যাবে কিন্তু সঙ্ঘকে টিকে থাকতে হবে। তাই নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে এই বিভেদ হওয়া স্বাভাবিক।