রাজনৈতিক পালাবদল ঘটেছে উড়িষ্যায়। বিজেডি সরিয়ে ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি। আর সে রাজ্যের নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে কেওনঝড়ের চার বারের বিধায়ক মোহনচরণ মাঝিকে বেছে নিয়েছে পদ্মশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বুধবারই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান তাঁর। ৫২ বছরের আদিবাসী নেতা মোহন গত আড়াই দশক ধরে বিজেপির সঙ্গে যুক্ত। দেশজুড়ে লোকসভার নির্বাচনের পাশাপাশি উড়িষ্যায় বিধানসভা ভোটও হয়েছিল। ১৪৭ আসনের ৭৮টিতে জিতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে বিজেপি। বিজেডি ৫১ এবং কংগ্রেস ১৪টি আসনে জিতেছে। অন্যেরা চারটিতে। রবিবার সে রাজ্যের ধর্মেন্দ্র প্রধান এবং জুয়েল ওরাওঁ রাষ্ট্রপতি ভবনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে উড়িষ্যার পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে যে নামগুলিকে ঘিরে জল্পনা তৈরি হয়েছিল, তার মধ্যে নাম ছিল না মোহনের। তবে শেষমেশ জল্পনার বৃত্তের বাইরে থাকা মোহনকেই ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বেছে নিয়েছেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। মোহনের জন্ম কেওনঝড় জেলার রাইকালা গ্রামে। তাঁর বাবা ছিলেন একজন নিরাপত্তারক্ষী। ছোটবেলা থেকেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ তথা আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মোহন। আইন নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে আরএসএস পরিচালিত সরস্বতী শিশু বিদ্যা মন্দিরে ‘গুরুজি’ হিসাবে কর্মজীবন শুরু হয়েছিল তাঁর। রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয়েছিল পঞ্চায়েত প্রধান হিসাবে। ১৯৯৭ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি রাইকালা গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান ছিলেন। সেই সময় উড়িষ্যার বিজেপির তফসিলি মোর্চার সাধারণ সম্পাদকের পদেও বসানো হয় মোহনকে।
প্রসঙ্গত, বিগত ২০০০ সালে উড়িষ্যা বিধানসভা নির্বাচনে কেওনঝড় কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতে যান মোহন। এর পর ২০০৪ এবং ২০১৯ সালেও কেওনঝড় থেকে জিতে বিধায়ক নির্বাচিত হন তিনি। ২০২৪-এও ওই কেন্দ্র থেকেই জিতেছেন। হেরে গিয়েছিলেন শুধু ২০১৪ সালে। মোহনের রাজনৈতিক কেরিয়ার দুই দশকেরও বেশি। বিধানসভা হোক কিংবা লোকসভা, প্রথম থেকেই দলের নির্বাচনী কৌশল তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। উড়িষ্যা বিজেপির নীতি নির্ধারণেও অন্যতম ভূমিকা রয়েছে মোহনের। গত বছর বিধানসভা অধিবেশন চলাকালীন বিজেডি সরকারের খাদ্যশস্য দুর্নীতির প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে স্পিকারের আসনে ডাল ছুড়ে সাসপেন্ড হয়েছিলেন তিনি। মিড-ডে মিল প্রকল্পে ডাল কেনার জন্য বরাদ্দ ৭০০ কোটি টাকা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এই কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন মোহন এবং বিজেপি বিধায়ক মুকেশ মহালিং। যদিও স্পিকারের আসনে ডাল ছোড়ার অভিযোগ অস্বীকার করে মোহন জানিয়েছিলেন, কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে তিনি স্পিকারের কাছে ডাল নিয়ে গিয়েছিলেন মাত্র। উড়িষ্যার প্রথম বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত হওয়ার পর পুরীর জগন্নাথের উদ্দেশে প্রণাম জানিয়ে মোহন বলেন, ‘‘জগন্নাথের আশীর্বাদেই বিজেপি উড়িষ্যায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে এবং সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। আমি ওড়িশার সাড়ে চার কোটি মানুষকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, যাঁরা পরিবর্তনের জন্য ভোট দিয়েছেন।’’ উল্লেখ্য, মোহনকে মুখ্যমন্ত্রী মনোনীত করার পাশাপাশি উপমুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে পার্বতী পরীদা এবং কণকবর্ধন সিংহদেওকে। মঙ্গলবার বিকেলে দলের দুই কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক রাজনাথ সিংহ এবং ভূপেন্দ্র যাদবের উপস্থিতিতে বৈঠকে ঘোষণা করা হয় নবনির্বাচিত বিজেপি বিধায়কদের নাম।