নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে গত ১০ বছরে সঙ্ঘ পরিবারের সঙ্গে ধীরে ধীরে দূরত্ব বাড়ছিল বিজেপির। সদ্যসমাপ্ত লোকসভা ভোটের ফলেই সেই দূরত্ব আরও স্পষ্ট হয়। আর তারপরেই কার্যত বিরোধীদের সুরে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত মুখ খোলায় প্রবল অস্বস্তি বিজেপির অন্দরে। প্রকাশ্যে এ নিয়ে মন্তব্য না করলেও পদ্মশিবিরে ঘরোয়া ভাবে বলা হচ্ছে, ভাগবত ভুল কিছু বলেননি। এ নিয়ে কংগ্রেসের কটাক্ষ, যাঁকে (নরেন্দ্র মোদী) উদ্দেশ করে ওই বার্তা, তিনি কি আদৌ শুনবেন? নিজেকে সংশোধন করবেন?
প্রসঙ্গত, এত দিন বিজেপি শক্তিশালী থাকায় সে ভাবে মুখ খোলেননি সঙ্ঘ নেতৃত্ব। এবারের ভোটের পরে স্পষ্ট যে, বিজেপির সেই সংখ্যার জোর আর নেই। তারা শরিক নির্ভর। যে কারণে প্রকাশ্যে মুখ খোলা শুরু করেছেন শীর্ষ সঙ্ঘ নেতৃত্ব। বিশেষ করে ভোটের পরেই প্রকাশ্যে নাম না করে মোদী সরকারের সমালোচনা করে সঙ্ঘ কর্মীদের যে ক্ষোভ তা-ও সামনে এনে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছেন সরসঙ্ঘচালক ভাগবত। নাগপুরে সঙ্ঘের শিক্ষানবিশদের সভায় তিনি এই পরামর্শ দিয়েছেন, যে বিরোধী নয়, প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখতে হবে বিরোধীদের।
তাঁর মতে, বিরোধীরা অন্য ভাবনাকে তুলে ধরেন। তাই রাজনীতিতে বিরোধীদের গুরুত্ব দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেন তিনি। মোদী সরকারের প্রথম দু’টি পর্বে সংখ্যাধিক্যের জোরে বিরোধী মতকে কেবল অগ্রাহ্য করাই নয়, গুঁড়িয়ে দেওয়ার মনোভাব দেখা গিয়েছে। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘যে ভাবে বিগত সরকারের শেষের দিকে লোকসভা থেকে বিরোধীদের নির্বিচারে সাসপেন্ড করে বিনা আলোচনায় বিল পাশ করানো হয়েছে, তা ভাল ভাবে নেননি দলের অনেক নেতাই। কিন্তু তা নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পাননি।’
এ বারের নির্বাচনে মোদীর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার বিরোধীদের লক্ষ্য করে কু-কথা বলার অভিযোগ উঠেছে। যা নিয়ে অভিযোগ গিয়েছিল নির্বাচন কমিশনের কাছে। এ নিয়ে সঙ্ঘ প্রধান বলেন, ‘ভোটে লড়ার সময়ে একটা মর্যাদা থাকা উচিত। সেই মর্যাদার পালন করা হয়নি।’ একই সঙ্গে, এক বছর ধরে অশান্ত থাকা মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়েও সরব হয়েছেন ভাগবত। যা এক প্রস্থ সমস্যায় ফেলেছে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বকে। বিরোধী নেতা কপিল সিব্বল প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের কথা শোনা আপনার ডিএনএ-তে নেই। কিন্তু অন্তত মোহন ভাগবতের কথা তো শুনুন।’