লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের পর এখনও দিল্লিতে পা রাখেননি তিনি। কিন্তু এই কলকাতাতে বসে ফোনেই জাতীয় রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কখনও বাড়ি থেকে, কখনও নবান্নে। ফোনের ওপাশে কখনও দিল্লি থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, কখনও অন্যান্য দলের নেত্রীবৃন্দ। জাতীয় রাজনীতির ওঠা-পড়ার মুহূর্তে যার ভূমিকা, মতামত এবং পরামর্শ কুশীলবদের জরুরি প্রয়োজন, তিনি তৃণমূল নেত্রীই। মঙ্গলবার থেকে শুরু, বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্তও সমান সক্রিয়।
প্রসঙ্গত, সাতবারের সাংসদ, চারবারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, দু’বারের রেলমন্ত্রী, তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী, সাতের দশক থেকে রাজ্য ও জাতীয় রাজনীতিতে থাকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সারা ভারতের বিভিন্ন দলের নেতা-নেত্রীদের পরিচয় এবং যোগাযোগ থাকবে, এটা অতি স্বাভাবিক। আপাতত তারই পুরোদস্তুর প্রভাব চলছে। জাতীয় রাজনীতিতে এখন অনেকটাই অভিভাবকের ভূমিকায় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। নতুনরা পরামর্শ নিতেও রীতিমতো ফোন করছেন। যেমন, সরকার পরিচালনার নানা খুঁটিনাটিতে কোনও মতামতের দরকার হলে পাঞ্জাব থেকে আপের মুখ্যমন্ত্রীর ফোন আসে। উত্তরপ্রদেশের অখিলেশ বিশেষ গুরুত্ব দেন মমতার কথায়। জেলবন্দি হেমন্ত সোরেনের স্ত্রী কল্পনা কোনও দরকার হলেই ফোন ঘোরান দিদিকে। এই তালিকা দীর্ঘ।
বড় দলের সিনিয়র মোস্ট নেতানেত্রী থেকে শুরু করে অন্যান্য সব শক্তির নেতারা কখনও সরকারি পদক্ষেপের পরামর্শে, কখনও রাজনৈতিক সমীকরণের জন্য মমতার কথার উপর নির্ভর করেন। সিনিয়রদের সঙ্গে দীর্ঘ রাজনীতি করেছেন নেত্রী। আবার জুনিয়র দেখেছেন বেড়ে উঠতে। এমনকী, রাজনৈতিক বা মতাদর্শগত লড়াই থাকলেও উল্টো মতের দলের অনেকের সঙ্গেও ব্যক্তিগত সম্পর্কে তৃণমূল নেত্রী কিন্তু সৌজন্যের প্রতীক। আপাতত কলকাতায় বসেই নিজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে সামলাচ্ছেন সব। দিল্লি পাঠিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। যে কোনও বৈঠকের পরেই দুজনের একপ্রস্থ কথাবার্তা হয়ে যাচ্ছে।
ইন্ডিয়ার প্রাথমিক রণকৌশল, মোদীদের সরকার গড়তে দিয়ে পাল্টা চাপ আর ল্যাজেগোবরে করার খেলা, এর পেছনেও মমতার মস্তিষ্ক। এই নড়বড়ে সরকারকে গদিতে বসিয়ে তাকে ভিতর এবং বাইরে থেকে সমানে উত্ত্যক্ত করার রণনীতি তৈরি করছেন তিনি। যদি এনডিএ-কে শপথ অবধি না পৌঁছতে দেওয়া যায়, তার আগেই কোনও অঘটনের চাল দাবার ছকের জন্ম নেয়, সেই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সুদূর দিল্লিতে খেলা হচ্ছে, আর তার রিমোট যেন কলকাতার হাতে। বাংলায় বিপুল সাফল্য এবং বর্ধিত সাংসদ সংখ্যা যেন এই দাপট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। দিল্লির বহু উত্থান-পতনের সাক্ষী মমতা। নিজেও বহুবার রাজধানীতে ছিলেন মোক্ষম সময়ে। এবারও হয়তো ক’দিন পরে যাবেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ফোনে ফোনে চলছে তাঁর জোট-রসায়ন।