কার্যত নস্যাৎ হয়ে গেল এক্সিট পোলের পূর্বাভাস। দীর্ঘ এক দশক পরে একদলীয় শাসনের অবসান ঘটতে চলেছে ভারতে। সেই সঙ্গে অষ্টাদশ লোকসভায় আনুষ্ঠানিক ভাবে ফিরতে চলেছে বিরোধী দলনেতার পদ। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ভোটগণনার ঘোষিত ফলাফল এবং প্রবণতা ইঙ্গিত দিচ্ছে এমনটা। ২০১৪ এবং ২০১৯-এর মতো এ বার আর সংসদের নিম্নকক্ষে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না তাঁর দল বিজেপি। ৪০০ পার দূর অস্ত, আড়াইশো পার করাও কঠিন হতে চলেছে পদ্মশিবিরের। ৫৪৫ আসনের( দু’টি মনোনীত আসন-সহ) লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ২৭৩টি। ট্রেন্ড অনুযায়ী বিজেপির দৌড় আড়াইশোর আগেই থেমে যেতে পারে। কেন্দ্রে সরকার গড়ার জন্য টিম মোদীকে নির্ভর করতে হবে এনডিএ-র দুই শরিক, চন্দ্রবাবু নায়ডুর তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি) এবং নীতীশ কুমারের জেডিইউ-এর উপর। ঘটনাচক্রে, অতীতে ওই দুই নেতারই একাধিক বার এনডিএ ত্যাগের এবং প্রত্যাবর্তনের ইতিহাস রয়েছে। দেশের ইতিহাসে মোদীই হতে চলেছেন দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী, যিনি পর পর তিন বার ক্ষমতায় এলেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে জওহরলাল নেহরুর মতো পর পর তিন বার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতা দখলের রেকর্ড করা সম্ভবত অধরাই থাকছে।
পাশাপাশি, এই লোকসভা নির্বাচন জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসের প্রাসঙ্গিকতা ফিরিয়ে আনতে পারে বলে গণনার ইঙ্গিত। বিরোধী দলনেতার পদের জন্য লোকসভায় ৫৫টি আসনে জেতা প্রয়োজন। কিন্তু ২০১৪-য় ৪৪ এবং ২০১৯-এ ৫২টি আসনে জেতা কংগ্রেস সংসদীয় বিধি অনুযায়ী সেই মর্যাদা পায়নি। এ বার ভোটগণনার প্রবণতা বলছে ৯০ থেকে ১০০টির মধ্যে আসন জিততে পারে কংগ্রেস। ‘ইন্ডিয়া’র সব সহযোগী দল মিলে দু’শোর গণ্ডি টপকাতে চলেছে। ফলে লোকসভার অধিবেশনেও এ বার বিরোধীদের কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে মোদীকে। মাত্র এক বছর আগে গড়ে ওঠে কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম-সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক শক্তির যৌথমঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’ (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স)-র (যে জোটের যার নামকরণে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে বিরোধী শিবির সূত্রের খবর) ফল যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। গত ১৯ জুলাই বেঙ্গালুরুতে বিজেপি বিরোধী নেতাদের দ্বিতীয় বৈঠকে ‘ইন্ডিয়া’র আবির্ভাবের সঙ্গেই ইতিহাসের পাতায় চলে গিয়েছিল ১৯ বছর আগে গড়ে ওঠা কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ। ‘ইন্ডিয়া’র শরিক দলগুলির মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ বা আংশিক আসন সমঝোতা হয়েছিল এ বারের ভোটে। বাংলায় তৃণমূল, কেরলে বাম, পঞ্জাবে আম আদমি পার্টি (আপ), জম্মু ও কাশ্মীরে পিডিপির মতো কেউ আবার কংগ্রেসের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। ভোটের পর জোটের প্রতিশ্রুতিতে নিজেদের রাজ্যে আলাদা করে লড়েছেন। ২০২৩ সালের ২৩ জুন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ প্রধান নীতীশ কুমারের ডাকে পাটনার বিরোধী জোটের বৈঠকে ১৫টি দল ছিল। জুলাইয়ে বেঙ্গালুরুতে সেই তালিকা বেড়ে হয়েছিল ২৬। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারিতে সদলবলে ফিরে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-তে ফিরছিলেন নীতীশ।