এবারের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের চেয়ে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ওপরে বেশি ভরসা করেছিলেন কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব। বিশেষত, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলার ভোটে শুভেন্দুর মতামতকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন বলে বিজেপির অন্দরেই আলোচনা ছিল। কিন্তু গোটা দেশে বিজেপির শক্তিক্ষয়ের দিনে বাংলাতেও বড় ধাক্কা খেয়েছে পদ্মশিবির। এই নির্বাচনে বিজেপি ভাল ফল করলে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ‘মুখ’ হয়ে উঠতে পারতেন শুভেন্দু। কিন্তু ফলের যে ইঙ্গিত, তাতে মুখ তো দূরস্থান, মুখরক্ষা করাই মুশকিল বিরোধী দলনেতার!
শুভেন্দুর সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছে বর্ধমান-দুর্গাপুরে দিলীপ ঘোষের হেরে যাওয়া এবং মেদিনীপুর আসনে অগ্নিমিত্রা পাল পিছিয়ে পড়ার কারণে। এটা সর্বজনবিদিত যে, শুভেন্দুর ইচ্ছাতেই দিলীপকে তাঁর জেতা আসন থেকে অন্যত্র সরিয়েছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। একটা সময়ে দিলীপ বেঁকে বসবেন বলেও মনে করা হলেও নেতৃত্বের প্রতি ‘আনুগত্য’ দেখিয়ে ২০১৯ সালে আড়াই হাজারের কম ভোটে জেতা আসনেই প্রার্থী হন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি। অথচ, গত লোকসভা নির্বাচনে মেদিনীপুরে দিলীপ জিতেছিলেন প্রায় ৮৯ হাজার ভোটে। সেই সঙ্গে দিলীপের নেতৃত্বেই ১৮টি আসনে জয় পেয়েছিল বিজেপি।
পদ্মশিবিরের অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, শুভেন্দু ‘গোঁ’ ধরে বসে না থাকলে মেদিনীপুরে পিছিয়ে পড়তে হত না। রাজ্যের সবচেয়ে সফল সভাপতি দিলীপকেও আনকোরা আসনে গিয়ে পরাজয়ের মুখে পড়তে হত না। এ নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব দিলীপ-ঘনিষ্ঠ বিজেপির ‘আদি’ নেতারা। তাঁদের দাবি, শুভেন্দুর জন্যই রাজনীতিতে এসেই জয় পাওয়া এবং অন্যদের জেতানো দিলীপকে হারানোর ছক করে অন্য আসনে পাঠানো হয়েছিল। ওই গোষ্ঠীর এক নেতা বলেন, ‘দিলীপদার জনপ্রিয়তাকে খাটো করে দেখা হয়েছে। সেটা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ভুল। আর শুভেন্দুর ওপরে এতটা ভরসা করাও ঠিক হয়নি।’
উল্লেখ্য, শুভেন্দুর ‘পছন্দ’ হিসাবে অগ্নিমিত্রা ছাড়াও ৫ বিধায়ককে টিকিট দিয়েছে বিজেপি। বর্ধমান পূর্বে অসীম সরকার, ঘাটালে হিরণ চট্টোপাধ্যায়, বারাসতে স্বপন মজুমদার, মুর্শিদাবাদে গৌরীশঙ্কর ঘোষ এবং আলিপুরদুয়ারে মনোজ টিগ্গা। এঁদের মধ্যে মনোজ ছাড়া সকলেই শুভেন্দুর ‘পছন্দের প্রার্থী’। কিন্তু মনোজ ছাড়া কেউই জেতার মতো জায়গায় নেই। সকলেই বড় ব্যবধানে পিছিয়ে রয়েছেন। শুভেন্দুকে কেন প্রার্থী বাছাইয়ে এত স্বাধীনতা দেওয়া হল কিংবা নিজের মতো করে প্রচার করতে দেওয়া হল কেন সে প্রশ্নও তোলা হচ্ছে। এদিকে, ভোটগণনার সকাল থেকেই কাঁথিতে নিজের বাড়ি শান্তিকুঞ্জেই রইলেন শুভেন্দু। ভোটের ফল অনুকূল হলে তিনি কলকাতায় আসতেন বিকেলের দিকে। কিন্তু এখন সে সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।