ফের ইউরোপ সেরার খেতাব এল লস ব্লাঙ্কো শিবিরের ট্রফি ক্যাবিনেটে। শনিবার রাতে ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডকে হারিয়ে নিজেদের ১৫তম ইউসিএল শিরোপা জিতল রিয়াল মাদ্রিদ। তবে এদিন জয় সহজ ছিল না কার্লো আনচেলোত্তির দলের। প্রথমার্ধের বেশি সুযোগ তৈরি করেছিল জার্মানির ক্লাব। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়াল রিয়াল। ৯ মিনিটের মধ্যে জোড়া গোল করে জয় এনে দিলেন ড্যানি কার্ভাহাল ও ভিনিসিয়াস জুনিয়র। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১৮ বার ফাইনালে উঠে নিজেদের ১৫তম ট্রফি জিতে নিল স্পেনের এই ঐতিহ্যবাহী ক্লাব। ১৯৫৬ সালে এই প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার পর থেকে টানা পাঁচ বার ট্রফি জিতেছিল তারা। আরও একটি জিতেছিল ১৯৬৬ সালে। ষষ্ঠ ট্রফি জেতার পরে ৩২ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল তাদের। কিন্তু গত ১০ বছরে ছ’বার ইউরোপের সেরা হয়েছে এই ক্লাব। উল্লেখ্য, এই খেতাব জয়ের সঙ্গেই নতুন নজির গড়েছেন রিয়াল মাদ্রিদ ম্যানেজার কার্লো আনচেলোত্তি। কোচ হিসেবে পাঁচবার ইউসিএল খেতাব জিতলেন তিনি, যা সবচেয়ে বেশি। এদিন ম্যাচের প্রথমার্ধে দাপট দেখায় ডর্টমুন্ড। শুরু থেকেই রক্ষণ জমাট রেখে বারবার প্রতিআক্রমণে ওঠে তারা। গোটা মরসুমে লুনিন গোলরক্ষকের ভূমিকায় থাকলেও ফাইনালে থিবো কুর্তোয়ার উপর ভরসা দেখিয়েছিলেন রিয়ালের কোচ কার্লো আনচেলোত্তি। প্রথমার্ধেই বেশ কয়েক বার কঠিন পরিস্থিতির সামনে পড়তে হয় তাঁকে। ২১ মিনিটের মাথায় ভাল সুযোগ পান ডর্টমুন্ডের করিন আদেয়েমি। তাঁর সামনে শুধুমাত্র ছিলেন কুর্তোয়া। কিন্তু দেরি করে ফেলায় গোল করতে পারেননি তিনি। রিয়ালের আক্রমণ সে রকম দানা বাঁধছিল না। যাঁর উপর আক্রমণের প্রধান দায়িত্ব ছিল সেই ভিনিসিয়াস জুনিয়রকে আটকে রেখেছিল ডর্টমুন্ডের রক্ষণভাগ। ম্যাটস হামেলসদের রক্ষণ ভেঙে সুযোগ তৈরি করতে পারছিলেন না জুড বেলিংহ্যামরা। ৪১ মিনিটের মাথায় প্রতি আক্রমণ থেকে আবার সুযোগ পায় ডর্টমুন্ড। বক্সের বাইরে থেকে শট নেন মার্সেল সাবিতজার। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে সেই বল বার করে দেন কুর্তোয়া।
এরপর প্রথমার্ধের শেষ দিকে পর পর দু’টি কর্নার পায় ডর্টমুন্ড। তা কাজে লাগাতে পারেনি তারা। গোলশূন্য অবস্থায় বিরতিতে যায় দু’দল।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়ায় রিয়াল। ৪৮ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে ভিনিসিয়াসকে ফাউল করায় ফ্রি কিক পায় রিয়াল। টনি ক্রুজের বাঁক খাওয়ানো শট ডান দিকে ঝাঁপিয়ে বাঁচান কোবেল। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে দুই প্রান্ত ধরে আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করে ডর্টমুন্ড। রিয়ালের দুই প্রান্তে ভিনিসিয়াস ও রদ্রিগো বল পেতে শুরু করায় চাপ বাড়ে ডর্টমুন্ডের বক্সে। ৫৬ মিনিটের মাথায় বক্সে ভাল বল পান ড্যানি কার্ভাহাল। যদিও ডান পায়ের ভলিতে গোল করতে পারেননি তিনি। ৬২ মিনিটের মাথায় আদেয়েমির ক্রস থেকে ভাল সুযোগ পান ফুলক্রুগ। তাঁর জোরাল হেড দক্ষতার সঙ্গে বাঁচান কুর্তোয়া। এরপর ৭৩ মিনিটের মাথায় ক্রুজের কর্নার থেকে নিখুঁত হেডারে গোল করেন ড্যানি কার্ভাহাল। এগিয়ে যায় রিয়াল। এক বার ডর্টমুন্ডের রক্ষণ ভাঙার পরে আক্রমণের গতি আরও বাড়ায় রিয়াল। দু’মিনিট পরেই ব্যবধান বাড়াতে পারতেন বেলিংহ্যাম। বক্সের মধ্যে থেকে দ্বিতীয় পোস্টে বল রাখার চেষ্টা করেন তিনি। শ্লটারবেকের পায়ে লেগে বল পোস্টের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। ৭৯ মিনিটে ফের ক্রুজের ফ্রি কিক ভাল বাঁচান কোবেল। ৮২ মিনিটের মাথায় ম্যাটসনের ভুলে বল পেয়ে যান বেলিংহ্যাম। তিনি পাস বাড়ান ভিনিসিয়াসকে। ঠাণ্ডা মাথায় গোল করেন ব্রাজিলীয় তারকা। ২-০ এগিয়ে যায় রিয়াল। ৮৭ মিনিটে হেডে ফুলক্রুগ গোল করলেও অফসাইডে তা বাতিল হয়। বাকি সময়ে আর গোল করতে পারেনি ডর্টমুন্ড। আরও এক বার ইউরোপের সেরা হয়ে মাঠ ছাড়ে রিয়াল মাদ্রিদ। ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে ড্যানি কার্ভাহালকে।