বাংলার মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার পর থেকেই রাজ্যবাসীর জন্য একাধিক জনমুখী প্রকল্পের সূচনা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মহিলাদের উন্নতিসাধনের উদ্দেশ্যে সবুজসাথী, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, এই প্রকল্পগুলি বড় অবদান রেখেছে ও ব্যাপক জনপ্রিয়তাও অর্জন করেছে। বেশ কিছু সমীক্ষার ফল আগেই দেখিয়ে দিয়েছে যে, বাংলার বুকে স্কুলে স্কুলে মেয়েদের ড্রপআউট হওয়ার প্রবণতা ক্রমশ কমিয়ে দিচ্ছে। আর সেই হার ও সংখ্যা কমিয়ে দেওয়ার পিছনে কাজ করে চলেছে মমতার মস্তিষ্কপ্রসূত দুই অমোঘ প্রকল্প কন্যাশ্রী ও সবুজসাথী। এখন দেখা যাচ্ছে, এই দুই প্রকল্পের হাত ধরে গ্রামবাংলার তপশিলি জাতি ও উপজাতি সমাজের মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার প্রতি বেশ আগ্রহবেড়ে গিয়েছে। এই দুই প্রকল্পের সাহায্যে বাংলার প্রত্যন্ত আদিবাসী ও তফশিলি জাতি-উপজাতি ভুক্ত এলাকায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়াদের সাফল্যের হার বাড়ছে। এই সব এলাকায় সরকারি স্কুলের পড়ুয়ারাও এখন শহরের পড়ুয়াদের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে বলে দাবি সেই সব স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের। বাংলার বুকে এক সময় জেলার প্রত্যন্ত আদিবাসী এলাকার পড়ুয়ারা অধিকাংশ স্কুলে যাওয়া শুরু করলেও পারিবারিক অনটন ও সচেতনতার অভাবে স্কুলছুট হয়ে যেত অল্প বয়সেই। তারপরই খুব কম বয়সে নাবালিকা মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিতেন পরিবারের লোকেরা। আবার কম বয়সে মা হতে গিয়ে অনেক মেয়েই অকালে প্রাণ হারাত।
আর এই মর্মান্তিক চিত্র বদলে দিতে উদ্যোগী হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যার ফলে স্কুলে স্কুলে মেয়েদের ড্রপআউটের হার ক্রমশ নিম্নমুখী হয়ে গিয়েছে। আর স্কুলে গিয়ে মেয়েদের মধ্যে পড়াশোনা করার আগ্রহ বেড়ে গিয়েছে। একই সঙ্গে এটাও সামনে আসছে যে, রাজ্য সরকারের বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প এই তপশিলি জাতি ও উপজাতি পরিবারগুলির আর্থিক উন্নয়ন ঘটানোর পাশাপাশি তাঁদের ছেলেমেয়েদেরও পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বাড়াচ্ছে দিনের পর দিন। যার ফল এখন এই সব প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুলগুলিতেও পড়াশোনার হার বৃদ্ধির পাশাপাশি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে পাশের হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করছেন রাজ্যের শিক্ষা দফতরের আধিকারিক এবং সেইসব স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। বাংলার বুকে এই উন্নয়নের ছবি সব থেকে বেশি ধরা পড়ছে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, বীরভূম, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান, মালদা এবং দুই দিনাজপুর জেলায়। এই সব জেলাতে প্রচুর সংখ্যক তপশিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন। দেখা যাচ্ছে, মমতার হাত ধরে সেই সব পরিবারের অধিকাংশ পড়ুয়াই রয়েছে প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থী। এই সব এলাকার পড়ুয়াদের কন্যাশ্রী ও সবুজসাথী প্রকল্পের কারণে পড়াশোনায় আগ্রহ বাড়ছে। সংখ্যালঘু এলাকাতেও এই একই ছবি ধরা পড়ছে। মুর্শিদাবাদ, মালদা, উত্তর দিনাজপুর জেলার এমন অনেক মেয়ে রয়েছে যারাব চলতি বছরে সেই পরিবারের প্রথম মেয়ে হিসাবে মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিল। অর্থাৎ, মমতার কন্যাশ্রী আর সবুজসাথী বাংলার বুকে যে কতটা তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে, তা এই চিত্র থেকেই স্পষ্ট।