গত দশ বছরেই রাজ্যের অন্যতম হেভিওয়েট কেন্দ্র হয়ে উঠেছে ডায়মন্ড হারবার। কিন্তু তারপরেও রাজ্য রাজনীতিতে তেমন আলোচনা নেই এই আসন নিয়ে। বিরোধীদের হ্যারিকেন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায় না এখানে। কারণ, এই কেন্দ্র অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গড়। তিনিই জিতবেন। ২০১৯ সালেই তাঁর জয়ের ব্যবধান ছিল ৩ লাখ ২০ হাজার। তখনও তিনি শুধুই সাংসদ। যুবর দায়িত্ব থাকলেও মূল দলে কোনও পদ ছিল না। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোট থেকেই দলের অন্যতম মুখ হয়ে ওঠেন অভিষেক। দায়িত্ব পান সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের।
প্রসঙ্গত, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মূলত গ্রামনির্ভর ডায়মন্ড হারবার আসন তৃণমূলের দখলে আসে ২০০৯ সালে। জিতেছিলেন প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র। বারবার কংগ্রেস-তৃণমূল-কংগ্রেস করা, নিজের দল ‘প্রগতিশীল ইন্দিরা কংগ্রেস’ তৈরি করা সোমেন শেষ পর্যন্ত মমতার শরণ নিয়েই জীবনে প্রথম বার সাংসদ হন। সিপিএমের শমীক লাহিড়িকে দেড় লাখ ভোটে হারিয়েছিলেন তৃণমূলের সোমেন। তবে ২০১৪ সালে তিনি দলত্যাগ করার পরই ক্রমশ এই আসনের মুখ হয়ে ওঠেন অভিষেক। এবার তাঁর হ্যাটট্রিক করার সুযোগ।
প্রসঙ্গত, তাঁর কেন্দ্রে সাংসদ অভিষেক যেমন ‘ডায়মন্ড হারবার ফুটবল ক্লাব’ শুরু করেছেন, তেমনই ডায়মন্ড হারবারবাসীর জন্য পৃথক ‘হেল্পলাইন’ খুলে রেখেছেন সারা বছর। শীতের মরসুমে নিয়ম করে দেশের নামজাদা সঙ্গীতশিল্পীদের জাঁকজমক পূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কখনও সোনু নিগম, কখনও মিকা, কখনও আবার হিমেশ রেশমিয়া এসে অনুষ্ঠান করে গিয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই গ্রামীণ লোকসভা কেন্দ্রে।
এ ছাড়াও পালা করে প্রতি বছর সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে ‘এমপি কাপ’-এর আয়োজন সাংসদ হিসাবে অভিষেকের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিই করেছে। কোভিডের সময়ে ডায়মন্ড হারবারবাসীর জন্য পৃথক চিকিৎসার বন্দোবস্ত থেকে সেখানকার গরিব জনতার মুখে খাবার তুলে দিয়েছেন অভিষেক। রাজ্য রাজনীতিতে বিখ্যাত হয়ে গিয়েছে তাঁর ‘ডায়মন্ড হারবার মডেল’। ফলে অভিষেকের হ্যাটট্রিক কেবল সময়ের অপেক্ষা। যদিও স্থানীয় নেতাদের ‘দাদাগিরি’, পঞ্চায়েত স্তরে ‘দুর্নীতি’র কথা বলে প্রচারে নেমেছে বিরোধীরা।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে অভিষেকের প্রথম বার জয়ের সময়ে ভোট অনেকটাই কমে গিয়েছিল তৃণমূলের। ১৩ শতাংশ ভোট কমেছিল। অভিষেক জিতেছিলেন ৭১ হাজার ভোটে। সে বারেও বিজেপি তিন নম্বরে ছিল। ২০১৯ সালে বিজেপি যখন ১৭ শতাংশের বেশি ভোট বাড়িয়ে দ্বিতীয় হয়, তখন তৃণমূলেরও প্রায় ১৬ শতাংশ ভোট বাড়ে। ডায়মন্ড হারবার বিধানসভা তো বটেই, সঙ্গে এই লোকসভার অন্তর্গত ফলতা, সাতগাছিয়া, বিষ্ণুপুর, মহেশতলা, বজবজ, মেটিয়াবুরুজেও ভোট বাড়ে তৃণমূলের। বড় ব্যবধানে জেতেন অভিষেক। এবার যে সেই ব্যবধান আরও বাড়বে তা বলাই বাহুল্য।