নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রবিবার থেকেই দিনভর বৃষ্টিতে ভিজছে বাংলা। এর মধ্যেই প্রকাশ্যে এল পার্ক স্ট্রিট মেট্রো স্টেশনের বেহাল দশা। যে দিকে চোখ যায়, কেবল জল আর জল। সেই জল প্রথমে হাঁটু, তার পর আরও একটু এগোতেই কোমর ছুঁইছুঁই! সুড়ঙ্গের দেওয়াল বেয়ে একাধিক জায়গা দিয়ে দ্রুত গতিতে জল ঢুকছে। দেখে মনে হচ্ছে, দেওয়ালে কোথাও চোরা ফাটল তৈরি হয়েছে। সোমবার সকালে পার্ক স্ট্রিট মেট্রো স্টেশনের এহেন পরিস্থিতি অতীতের অতি বড় দুর্যোগেও কেউ দেখেছেন বলে মনে করতে পারছেন না। যদিও মেট্রো স্টেশনে জল ঢোকার ঘটনা একেবারে নতুন নয়। কিছু দিন আগের বৃষ্টিতেই পার্ক স্ট্রিট স্টেশন ভেসে গিয়েছিল। এর আগেও পার্ক স্ট্রিট স্টেশনে জল ঢোকার নজির রয়েছে। তবে সোমবার সেই পার্ক স্ট্রিটই যাত্রীদের চূড়ান্ত দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়াল। সোমবার সকালে ৪ ঘণ্টা ১৪ মিনিট মেট্রো পরিষেবা বন্ধ ছিল পার্ক স্ট্রিট, ময়দান এলাকায়। মেট্রো চলছিল কেবল দক্ষিণেশ্বর থেকে গিরিশ পার্ক এবং টালিগঞ্জ থেকে কবি সুভাষের মধ্যে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে রবিবার সারা রাত বৃষ্টি হয়েছে কলকাতায়। সোমবার সকালেও বৃষ্টির বিরাম নেই। যার জেরে এমনিতেই জলমগ্ন গোটা শহর। মেট্রো স্টেশনেও জল ঢুকে পড়ায় উদ্বেগে যাত্রীরা। সদুত্তর দিতে পারছেন না মেট্রো কর্তৃপক্ষও। ‘‘আমি এত বছর ধরে কাজ করছি, মেট্রো স্টেশনে জল ঢুকে পড়ছে, তাতে পরিষেবা বন্ধ করে দিতে হচ্ছে, এই পরিস্থিতি আগে কখনও দেখিনি। কিছু জায়গা থেকে কোনও ভাবে হুড়হুড় করে জল ঢুকছে। সেই জায়গাগুলি এখনও চিহ্নিত করা যায়নি। আপাতত আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য পরিষেবা স্বাভাবিক করা। কী ভাবে জল ঢুকছে, তা তার পর ভাবা যাবে। তবে মেট্রোর ভাবমূর্তির ক্ষেত্রে এটা খারাপ’’, জানিয়েছেন মেট্রোরেলের সঙ্গে ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যুক্ত এক কর্তা।
যদিও ইতিমধ্যেই পাম্পের মাধ্যমে পার্ক স্ট্রিট স্টেশনের ভিতর থেকে জল বার করা হয়েছে। মেট্রোরেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র জানান, ‘‘সকাল থেকে মেট্রো চলছিল। পরিষেবা আটকাল শহরে জল জমার পর। ময়দান চত্বরে জমা জল নীচে নামতে পারছে না। তাকে তো কোথাও বেরোতে হবে। তাই পার্ক স্ট্রিট স্টেশনের উপর দিয়ে চুঁইয়ে জল নীচে চলে এসেছে। স্টেশনে তাই জল ঢুকে গিয়েছে। এই অবস্থায় যাত্রীদের স্টেশনে ঢুকতে দেওয়া যায় না। বিপদ এড়াতেই তাই এখানে মেট্রো বন্ধ রাখা হয়েছিল।’’ কোথা থেকে জল ঢুকছে, তা জানা যায়নি। তবে পাম্পিং ব্যবস্থায় কোনও গোলমাল হয়ে থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন কৌশিক। কর্তৃপক্ষের বক্তব্যেও অবশ্য দুশ্চিন্তা কাটছে না যাত্রীদের। কারণ, শহর এবং শহরতলির এক বড় অংশের মানুষের প্রতি দিনের যাতায়াতের ভরসা মেট্রোরেল। বর্ষা আসছে। কলকাতায় আরও বৃষ্টি হওয়াই স্বাভাবিক। সে ক্ষেত্রে প্রতিবারই যদি শহরে জল জমার কারণে কয়েক ঘণ্টা ধরে মেট্রো বন্ধ রাখতে হয়, তবে ভোগান্তি বাড়বে। মেট্রোর তরফে রাস্তার জল চুঁইয়ে স্টেশনে ঢোকার কথা বলা হলেও প্রশ্ন উঠেছে রক্ষণাবেক্ষণ নিয়েই। অনেকেই বলছেন, কর্তৃপক্ষের তরফেই কোনও গাফিলতি রয়েছে। না মেট্রো কর্তৃপক্ষ অবশ্য রক্ষণাবেক্ষণে গাফিলতির অভিযোগ মানতে নারাজ। কর্মীরা জানাচ্ছেন, তাঁরা মেট্রোর দেওয়াল, প্ল্যাটফর্ম ইত্যাদি রক্ষণাবেক্ষণ করেন। বাইরে থেকে জল ঢুকলে তা আগে থেকে বোঝা সম্ভব নয়। জল কোথা থেকে ঢুকছে, তা এখনও চিহ্নিত করা যায়নি। তবে প্রকাশ্যে আসা ছবি থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, পার্ক স্ট্রিট মেট্রো স্টেশনের দেওয়াল দিয়ে জল ঢুকছে প্রতিনিয়ত। সমস্যার সুরাহা কীভাবে হবে, তা এখনও অজানা।