ঘনিয়ে এসেছে ঘোর দুর্যোগ। ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’-এর প্রভাবে রবিবার থেকেই ভারী বৃষ্টিতে ভিজছে বাংলা। পরিস্থিতির মোকাবিলায় রাজ্যে বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে ইতিমধ্যেই সমস্ত প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছে রাজ্য সরকার। এ ব্যাপারে বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার সদর দফতর বিদ্যুৎ ভবনে কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। যা ২৪×৭ ভিত্তিতে চলবে বলে জানিয়েছে বণ্টন সংস্থা। রবিবার রাতে কন্ট্রোল রুমে বিদ্যুৎমন্ত্রী, বিদ্যুৎ সচিব-সহ বণ্টন সংস্থার পদস্থ আধিকারিকরা উপস্থিত থেকে পরিস্থিতির উপর নজর রাখেন। রবিবার রাতে রিমেলের ল্যান্ডফল হলেও সোমবার ও আগামীকাল, মঙ্গলবারও ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলত জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুর্ঘটনা এড়াতেও সতর্কবার্তা দেওয়া হচ্ছে বিদ্যুৎসংস্থার তরফে। “অরূপকে বলছি, বিদ্যুতের পোলগুলো ভালো করে কেয়ার করতে। বিদ্যুৎ যদি কারও চলে যায়, চিন্তা করার কিছু নেই। আমরা জেনারেটর রেখেছি। ব্যবস্থা করব। কিন্তু সারাতে তো টাইম দিতে হবে। খুব ঝড়-জল হলে দয়া করে টিভি চালাবেন না। দয়া করে তখন এসি চালাবেন না। ইমার্জেন্সি লাইট-ফ্যান ছাড়া বাকিগুলো একটু অফ করে রাখবেন”, রবিবার সোনারপুর দক্ষিণে নির্বাচনী সভায় জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা।
পাশাপাশি, দক্ষিণবঙ্গের যে সমস্ত জেলা, বিশেষ করে গাঙ্গেয় ও সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় যেখানে প্রবল ঝড় ও ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে, সেই সব অঞ্চলে সব মিলিয়ে মেরামতির জন্য দেড় হাজারের মতো টিম মোতায়েন করেছে বণ্টন সংস্থা। রাজ্য প্রশাসনের জনৈক আধিকারিক জানান, “বণ্টন সংস্থার সমস্ত কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে রিপেয়ারিং টিম রয়েছে। আগে থেকেই পর্যাপ্ত সংখ্যক পোল এবং কেব্ল পাঠানো হয়েছে, যাতে ঝড়ে পোল ভেঙে বা উপড়ে গেলে এবং তার ছিঁড়ে গিয়ে বিদ্যুৎ চলে গেলে দ্রুত লাইন মেরামতি করে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা যায়। সুন্দরবনের সমস্ত দ্বীপে বণ্টন সংস্থার মেরামতির দল রয়েছে।” এর আগে আম্ফানের সময়ে বহু জায়গায় ঝড়ে গাছের ডাল পড়ে তার ছিঁড়ে গিয়েছিল। এবারও একই পরিস্থিতি হলে ডাল কেটে বিদ্যুৎ পরিষেবা দ্রুত স্বাভাবিক করতে বণ্টন সংস্থা ডাল কাটার করাতও রিপেয়ারিং টিমগুলিকে দিয়ে রেখেছে। পাশাপাশি, সংস্থার প্রায় ২.৩০ কোটি গ্রাহককে আগাম এসএমএস পাঠিয়ে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়ার সতর্কবার্তাও দেওয়া হয়েছে। এদিকে সিইএসসি-ও যে কোনও আপৎকালীন পরিস্থিতির মোকাবিলায় ৫ হাজারের বেশি কর্মী ও আধিকারিককে মোতায়েন করেছে। কলকাতা পুরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে রিপেয়ারিং টিম এবং শহরের বিভিন্ন এলাকায় ১০০-র বেশি জেনারেটর রাখার কথা জানিয়েছে সিইএসসি। দুর্ঘটনা রোধে যাতে ডিস্ট্রিবিউশন বক্সগুলি তৎক্ষণাৎ সুইচ অফ করা যায়, সেজন্য নিচু এলাকাগুলিতে ডিস্ট্রিবিউশন বক্সগুলিতে আইওটি সেন্সর ভিত্তিক ওয়াটার লেভেল ইন্ডিকেটর লাগিয়েছে সিইএসসি। এছাড়া কলকাতা ও তার আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অতিরিক্ত রিপেয়ার টিম ও কুইক রেসপন্স টিম মোতায়েন করা হয়েছে, এমনটাই জানানো হয়েছে সিইএসসি-র তরফে।