রাজ্যে ঘনিয়ে এসেছে তুমুল দুর্যোগের আবহ। ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘রিমেল’। শনিবার আলিপুর আবহাওয়া দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এই তিন জেলাতেই ভারী বৃষ্টির সতর্কতা থাকছে। রবিবার প্রবল বর্ষণ হতে পারে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায়। ২০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা দু-এক জায়গায়। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, নদিয়া এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রতি ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত দমকা ঝোড়ো বাতাস বইতে পারে। অন্যান্য জেলায় বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলায় ইতিমধ্যেই উপকূলীয় জেলাগুলিতে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন শনিবার কাকদ্বীপে জরুরি বৈঠক সেরেছে। উপকূল এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের সর্তকতা জারি করে মাইকে চলছে প্রচার। বকখালির হোটেলগুলিতে বুকিং আপাতত বন্ধ। মৌসুনির হোম-স্টেগুলি শনিবারের মধ্যেই পর্যটকশূন্য করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে নামখানা ব্লক প্রশাসন। সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছেন। শনিবার জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ), সুন্দরবন পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও, আবহাওয়া দপ্তর, এসডিও ও বিডিও এবং পূর্ত, জনস্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য-সহ বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে এই জরুরি বৈঠক করেন। সাগর ব্লকের খোলা হচ্ছে ১৭ টি ফ্লাড শেল্টার। এছাড়াও প্রস্তুত রাখা হচ্ছে বিভিন্ন স্কুলবাড়িও। যথেষ্ট পরিমাণে মজুত রাখা হচ্ছে শুকনো খাবার, চিঁড়ে, গুড়, বিস্কুট, চানাচুর এবং বেবিফুড।
পাশাপাশি, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর শুধু সাগর ব্লকেই চল্লিশ হাজার পানীয় জলের পাউচ প্যাকেট প্রস্তুত রেখেছে। গ্রামীণ হাসপাতাল গুলিতে ২৪ ঘন্টা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের ডিউটিতে থাকতে বলা হয়েছে। সুন্দরবনের নদীগুলিতে পূর্ণিমার কোটাল পরবর্তী জলস্তর বইছে কিছুটা উঁচুতে। নামখানা ব্লকের মৌসুনিতে চারটি ফ্লাড শেল্টার-সহ ওই ব্লকে মোট ১৩ ত্রাণ শিবির প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ওই এলাকাগুলির উপর কড়া নজর রেখেছে ব্লক প্রশাসন ও পুলিশ। জেলাশাসক শনিবার কাকদ্বীপে জানান, আবহাওয়া দফতর ২৬ ও ২৭শে মে এই দু’দিন ঘূর্ণিঝড়ের ও ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সতর্কতা জারি করেছে। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ব্লক মহকুমা ও জেলা স্তরে খোলা হয়েছে কন্ট্রোলরুম। বিপর্যয় মোকাবিলার সঙ্গে যুক্ত জেলার সমস্ত কর্মী ও আধিকারিকদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সাগর, পাথরপ্রতিমা, নামখানা, গোসাবা, কুলতলি ও জয়নগর এলাকায় নিচু এলাকাগুলি থেকে মানুষজনকে সরানোর প্রস্তুতি চলছে। সাগর, কাকদ্বীপ, গোসাবায় এনডিআরএফ -এর দলকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। ফেরি সার্ভিস বন্ধ রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সবসময়ই সতর্ক রয়েছে বলে তিনি জানান। রাজ্য পরিবহণ দফতরের নির্দেশ অনুযায়ী, বিপর্যয় রুখতে শনিবার থেকে ২৭শে মে অর্থাৎ সোমবার পর্যন্ত ফেরি পরিষেবা বন্ধ রাখা হল। হুগলি জেলাতেও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবের আশঙ্কায় চুঁচুড়া, চন্দননগরের বিভিন্ন ঘাটে ফেরি পরিষেবা বন্ধ থাকবে আগামী তিনদিন। যার জেরে ফেরি পরিষেবার নিত্যযাত্রীরা খানিকটা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন।