রাজ্যে ফের ঘনিয়েছে দুর্যোগের পূর্বাভাস। ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় রিমেল। চেন্নাই উপকূলের দক্ষিণ পশ্চিম দিকে, অন্ধ্র উপকূলের দক্ষিণ পূর্ব দিকে, অবস্থানগত ভাবে পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগরে গতকাল বেলা আড়াইটে নাগাদ তৈরি হওয়া নিম্নচাপ প্রায় একই জায়গায় অবস্থান করে ক্রমশ জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করছে এবং নিজের শক্তি বাড়াচ্ছে। শুক্রবার ২৪ তারিখ সকাল ৮ টা নাগাদ এটি অতি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। শক্তি সংগ্রহ করতে করতে এরপর এটি উত্তর-পূর্ব অর্থাৎ, মায়ানমার সাগরের দিকে এগোতে থাকবে। পরের দিন শনিবার ২৫ তারিখ এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে চলেছে বলে অনুমান আবহবিদদের। ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হওয়ার পর এটির ব্যাপ্তি বাড়বে। তখন আর শুধু উত্তর-পূর্ব নয়, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরেও এটি নিজের প্রভাব বিস্তার করবে। ঘূর্ণিঝড়ের গঠন সম্পূর্ণ হলে এটির সম্ভাব্য ল্যান্ডফল, আই এবং টেল এন্ড সম্পর্কে আরও বিস্তারিত আপডেট দেবে দিল্লীর মৌসম ভবন। এখনও পর্যন্ত যা খবর, তাতে ‘রিমেল’ নামের এই ঘূর্ণিঝড় খুব বেশি শক্তিশালী এবং ধ্বংসাত্মক না-ও হতে পারে। এর গতিবেগ হতে পারে ৬৫ থেকে ৭০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। তবে এই আপডেট কতটা নিখুঁত হতে চলেছে, তা আগামীকাল, ২৪ মে-র রাত বা ২৫শে মে-র ভোরের আগে স্পষ্ট নয়। বৃহস্পতিবার এবং আগামীকাল শুক্রবার বৃষ্টির দাপট কিছুটা কম। তবে শনি ও রবিবার ভারী বৃষ্টির সতর্কতা উপকূলে। আজ বিকেলের মধ্যে মৎস্যজীবীদের উপকূলে ফিরে আসতে বলা হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যাওয়ার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। শুক্রবার থেকেই সমুদ্র উত্তাল হবে। ঢেউয়ের উচ্চতা বাড়বে। আগামী সাতদিন বৃষ্টিতে ভিজতে পারে দক্ষিণবঙ্গে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার দক্ষিণবঙ্গের বেশিরভাগ জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা বা মাঝারি বৃষ্টির সঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিবেগের দমকা ঝোড়ো হাওয়া বইবে। এর মধ্যে শুক্রবার উপকূলের জেলা পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
পাশাপাশি, শনিবার ভারী বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা উপকূলের জেলায়। পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার কিছু অংশে শনিবার ৭০ থেকে ১১০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে । উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় সেদিন ৮০ থেকে ৯০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে। ৩ জেলাতেই বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ৫০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা ঝোড়ো বাতাস বইবে। শনিবার কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতেই ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা ঝোড়ো হাওয়া, সঙ্গে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি থাকবে। ২৬শে মে রবিবার ভারী বৃষ্টির সতর্কতা পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা উপকূলের দুই জেলায়। ৭০ থেকে ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে এই তিন জেলায়। এই তিন জেলায় ৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় বা তার বেশি গতিবেগে দমকা ঝোড়ো বাতাস বইবে। রবিবার কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের মোট ৯টি জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ মাঝারি বৃষ্টি এবং ৫০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা ঝোড়ো হাওয়া বইবে। ঝড়বৃষ্টি হবে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, কলকাতা, হুগলি, হাওড়া, নদীয়া, ঝাড়গ্রাম ও বাঁকুড়ায়। বাকি জেলাতেও ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া থাকবে। উত্তরবঙ্গে বৃহস্পতি ও শুক্রবার শুধুমাত্র দার্জিলিং কালিম্পংয়ে বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি। শনিবার বৃষ্টি বাড়বে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং, এই তিন জেলাতেই। এখানে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। রবিবার উত্তরবঙ্গের সব জেলাতেই বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা বৃষ্টি, সঙ্গে হালকা ঝোড়ো হাওয়া। সোমবার জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কালিম্পংয়ে বৃষ্টি বেশি হবে। মঙ্গলবার জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা। মালদাতেও বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে পারে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু সামান্য অগ্রসর হয়েছে। আগামী দু’দিনে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের আরও বেশ কিছু এলাকা এবং আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের আরো বেশ কিছু এলাকা দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আওতায় আসবে। প্রবণতা এরকম থাকলে ৩১ মে কেরলে বর্ষা প্রবেশ করবে। ১১ থেকে ১৭ জুনের মধ্যে তা দক্ষিণবঙ্গে প্রবেশ করতে পারে। কলকাতা আজ সকালে আকাশ কিছুটা পরিষ্কার। বেলা বাড়লে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হবে। বিকেলের দিকে বজ্র বিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়ার পূর্বাভাস। বৃষ্টি হওয়ার আগে পর্যন্ত চূড়ান্ত আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি অনুভূত হবে। কলকাতার আলিপুরে গতকাল ৭২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বালিগঞ্জ এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে ১১৪ মিলিমিটার। শিয়ালদহ এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে ৭৮ মিলিমিটার। গতকাল উত্তর কলকাতার থেকে দক্ষিণ কলকাতা বেশি বৃষ্টি পেয়েছে। বৃষ্টির জেরে গতকাল রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমে ২৬.৪ ডিগ্রি হয়েছিল। গতকাল দিনের তাপমাত্রা ছিল ৩৬.১ ডিগ্রি। বাতাসে এই মুহূর্তে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ৫৪ শতাংশ। বেলা বাড়লে তা প্রায় ১০০ শতাংশ ছুঁয়ে ফেলবে বলেই পূর্বাভাস হাওয়া অফিসের।