লোকসভা নির্বাচনের আবহে সরগরম দেশের রাজনীতির আবহ। এর মধ্যেই প্রকাশ্য এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। যার জেরে ফের বড়সড় বিতর্কের কেন্দ্রে মোদী সরকার তথা শাসকদল বিজেপি। উল্লেখ্য, পদ্মশিবিরের আড়ালে রয়েছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ, যা তৈরি হয়েছিল ১৯২৫ সালে। সংঘ তৈরির নেপথ্যে ছিল নির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। মূলত ব্রাহ্মণ শ্রেণীই তৈরি করে সংঘ, উদ্দেশ্য ছিল হিন্দু রাষ্ট্র তৈরি। ১৯৫১ সালে তৈরি হয় জনসংঘ, ১৯৮০ সালে তৈরি হয় বিজেপি। আরএসএস তৈরির দুটি ভিত্তি রয়েছে। এক, ধর্মীয় বিভাজন। দুই, জন্মের ভিত্তিতে বর্ণ, শ্রেণী ও লিঙ্গ বৈষম্যের প্রতিষ্ঠা। দেখা যাচ্ছে, বিজেপিরও একই লক্ষ্য। দলিত, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী, আদিবাসী, জনজাতি পুরুষ এবং মহিলাদের সম্পূর্ণভাবে দমন করে চলেছে সংঘ। রাজনীতির মাধ্যমে তা বাস্তবায়িত করার আপ্রাণ চেষ্টা করছে বিজেপি। সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী, ভারতের মোট জনসংখ্যার ১৪.২ শতাংশ। মোদীর ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস’-র ঘোষণা সত্ত্বেও মুসলমানের উপর ক্রমাগত চলছে দেশে। মুসলমানদের মধ্যে শিয়া, পাসমানদাস ও সুফিদের নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় মুসলিম মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। দুই কক্ষ মিলিয়ে বিজেপির ৩৯৫ জন সাংসদ রয়েছে। তাতে একজনও মুসলমান নয়। মোদীর মন্ত্রিসভার ৫৭ জন সদস্যের মধ্যে কোনও মুসলমান নেই। মোদী আমলে গত দশ বছরে মুসলমানদের বারবার হিংসার স্বীকার হতে হয়েছে। দিল্লিতে ২০১৯ সালে সিএএ-র বিরুদ্ধে মুসলমানরা প্রতিবাদ করে, তাঁদের অন্তর্ভুক্তির দাবিতে। সেখানেও অব্যাহত হিংসা। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্য অনুযায়ী, ৫৩ জন নিহত হন দিল্লী হিংসার কারণে। যার মধ্যে ছিলেন ৩৮ জন মুসলমান।
পাশাপাশি, গরুর মাংস বিক্রিতেও মুসলমানদের নিশানা করা হয়েছে। দাদরিতে আক্ষলাক থেকে শুরু করে ট্রেনে জুনায়েদ, হিংসার শিকার হচ্ছেন মুসলমানরা। এমন একশোর বেশি আক্রমণ ঘটেছে মুসলমানদের উপর। বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ৯৭% এমন আক্রমণের ঘটনা নথিবদ্ধ হয়। ৬৩-র মধ্যে ৩২টি হিংসার ঘটনা ঘটে গরুকে কেন্দ্র করে। প্রায় সবই ঘটে বিজেপিশাসিত ‘ডবল ইঞ্জিন’ রাজ্যে। এছাড়াও রয়েছে লাভ জিহাদ, আন্তঃধর্মীয় বিয়ে যেখানে হিন্দু মেয়ে ও মুসলমান যুবকের বিয়েকে কেন্দ্র করে হিংসাত্মক আক্রমণ করা হয়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, একাধিক বিষয়ের মাধ্যমে মুসলমানদের টার্গেট করছে বিজেপি। ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা হুমকি এবং আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। পাশাপাশি তাঁদের উপর দারিদ্র্যের আঘাত নামিয়ে আনা হচ্ছে। খ্রিস্ট ধর্মের মানুষেরাও আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। ১৯৯৯ সালে ধর্মযাজক গ্রাহাম স্টুয়ার্ডকে জীবিত পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়েছিল। উড়িষ্যায় হিংসায় একশো জন খ্রিস্টান নিহত হয়েছিলেন এবং তিনশো গির্জা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ধর্মপ্রচারকরা ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করছে এই অজুহাতে প্রার্থনা সভায় আক্রমণ করা হয়। ওপেন ডোরস অনুসারে, খ্রিস্টানদের বসবাসের জন্য ভারত দশম সবচেয়ে বিপজ্জনক জায়গা। খ্রিস্টানদের শীর্ষস্থানীয় কিছু পাদ্রীকে প্রলোভিত করার চেষ্টার অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। ২৫শে ডিসেম্বর, প্রধানমন্ত্রী খ্রিস্টান প্রতিনিধিদের শুভেচ্ছা জানাতে আমন্ত্রণ জানান। তাদের সামাজিক কাজের জন্য প্রশংসা করেন মোদী এবং প্রভু যীশু খ্রিস্টের শিক্ষার প্রশংসা করেছেন তিনি। অন্যদিকে, খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের উপর আক্রমণের অভিযোগ রয়েছে বিজেপির বিরুদ্ধে। বিভিন্ন মঞ্চ, সংগঠন তৈরি করা হচ্ছে বিজেপির তরফে। দলিত, সংখ্যালঘুদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চলছে সেগুলির মাধ্যমে। প্রকৃতপক্ষে এসবের উদ্দেশ্য ক্ষমতায় থেকে যাওয়া এবং সংঘের ব্রাহ্মণ্যবাদকে দেশে প্রতিষ্ঠা করা, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।