গত বছরের মে থেকে একটানা কয়েক মাস জাতি হিংসার আগুনে জ্বলেছে উত্তর-পূর্বের পাহাড়ি রাজ্য মণিপুর। কুকি আর মেইতেইদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন বহু মানুষ। ঘটেছে গণধর্ষণ, জীবন্ত পুড়িয়ে মারার মতো ঘটনাও। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যতই দাবি করুক না কেন সেখানে শান্তি ফিরেছে, বাস্তব বলছে এখনও পুরোপুরি শান্ত হয়নি মণিপুর।
বিষ্ণুপুরে মেইতেই সম্প্রদায় সংখ্যাগরিষ্ঠ। পাশের জেলা চূড়াচাঁদপুরে আবার ভিন্ন ছবি। সেখানে সরকারি অফিসকাছারি, থানা-পুলিশ এমনকী পুলিশ-প্রশাসনের পদস্থ কর্তাদেরও দফতরেও কুকিদের একচ্ছত্র আধিপত্য। ক’দিন আগেই এক অতিরিক্ত পুলিশ কর্তার অফিসে হামলা চালায় কুকি জঙ্গিরা। এছাড়া দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে গোলাগুলি, বোমা, মর্টার নিক্ষেপ তো লেগেই আছে। দুই শিবিরের হাতেই রয়েছে থানা এবং অস্ত্রাগার থেকে লুঠ হওয়া অস্ত্রশস্ত্র। গত সপ্তাহেই বিষ্ণুপুরে মর্টারের আঘাতে নিহত হন রাতে ক্যাম্পে ডিউটিরত সিআরপিএফের দুই বাঙালি জওয়ান।
এমন পরিস্থিতির মধ্যেই মণিপুরের দুটি আসনে লোকসভার ভোট গ্রহণ মোটের উপর শান্তিতেই হয়েছে। ভোটদানের হারও হতাশাব্যঞ্জক নয়। কুকি ও মেইতেইদের একাধিক সংগঠন ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছিল বটে। তাতে তেমন একটা সাড়া মেলেনি। যদিও ভোট হয়েছে ‘জোর যার মুলুক তার’ পরিবেশে। ভোটের পর নতুন করে অশান্তি শুরু হয়েছে জাতিদাঙ্গার বর্ষপূর্তিকে সামনে রেখে। জাতিদাঙ্গার বর্ষপূর্তিকে সামনে রেখে কুকিদের একাধিক সংগঠন ৩ মে’তে ‘কালা দিবস’ ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে, মেইতেইরা বলছে মণিপুরের ইতিহাসে ২০২৩-এর ৩ মে বহিরাগত মাদককারবারিদের আক্রমণের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
মণিপুরে জাতিদাঙ্গার একটি কারণ কুকিদের বহিরাগত এবং মাদক ব্যবসায়ী বলে মেইতেইদের অভিযোগ। নানা সময়ে তাতে গলা মিলিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং, যিনি নিজে মেইতেই সম্প্রদায়ের মুখ। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই বিবাদে অগ্নিসংযোগের কাজ করে গত বছর এপ্রিলে মণিপুর হাইকোর্টের একটি রায়। তাতে মেইতেইদের দাবি মেনে তাদের তফসিলি উপজাতি ঘোষণার দাবি রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করতে হয়। যা মানতে রাজি নয় কুকিরা। এই সম্প্রদায়ই রাজ্যে তফসিলি উপজাতি বলে স্বীকৃত। মেইতেইরাও একই সুবিধা পেয়ে গেলে কুকিরা সংরক্ষণ-সহ নানা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে, আশঙ্কা ওই সম্প্রদায়ের।
ওই রায় প্রত্যাহারের দাবিতে পার্বত্য মণিপুরের প্রধান শহর চূড়াচাঁদপুরে কুকিদের সংগঠন ইন্ডিজেনাস ট্রাইবাল লিডার্স ফোরাম মিছিলের ডাক দিলে তার উপর হামলা হয়। অভিযোগ, হামলাকারীরা ছিল মেইতেই সম্প্রদায়ের লোক৷ পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে সেই রায় বাতিল হলেও জাতিদাঙ্গা তাতে থামেনি। রাজধানী ইম্ফল-সহ উপত্যকার বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে কুকি সম্প্রদায়ের লোকেরা পার্বত্য মণিপুর এবং মিজেরাম, নাগাল্যান্ডে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। অন্যদিকে, পার্বত্য মণিপুরের কুকি বহুল এলাকা মেইতেই শূন্য। দু-পক্ষেরই বিপুল সংখ্যক মানুষ বর্তমানে ত্রাণ শিবিরে আছে।