উত্তরপ্রদেশ যার, দিল্লির কুর্সি তার। ভারতীয় রাজনীতির অন্দরে প্রায় মিথ হয়ে গিয়েছে এই কথাটি। তবে এবারের লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশ নয়, দেশের অন্য তিনটি রাজ্য ভোটের ফল নির্ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। শুধু তাই নয়, এই তিনটি রাজ্যই অনেক নেতার ভাগ্যও নির্ধারণ করবে। এই তিনটি রাজ্যই ঠিক করে দেবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘চারশো পারের’ স্বপ্ন সত্যি হবে কি না। এই তিনটি রাজ্য হল বাংলা, বিহার এবং মহারাষ্ট্র। এই তিন রাজ্যের ভোটাররা সংসদে ১৩০ জন সাংসদ পাঠাবেন, যা লোকসভার প্রায় এক-চতুর্থাংশ আসন।
প্রসঙ্গত, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল বাংলায় ৪২ আসনের মধ্যে ১৮টিতে জয়। ২০১৪-য় প্রাপ্ত ১৭ শতাংশ ভোট বেড়ে হয়েছিল ৪০ শতাংশ। ১ জুন পর্যন্ত বাংলায় ভোট চলবে। কাজেই এখনই বাংলার হাওয়া স্পষ্ট হবে না। তবে ওয়াকিবহাল মহল বলছে, বাংলায় এবার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। বিজেপি যদি ২০১৯ সালের তুলনায় আরও দুটি আসন বাড়িয়ে নেয় তবে এটি তার জন্য একটি বড় বিজয় হবে। আবার তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি বিজেপির কাছ থেকে দুটি আসন ছিনিয়ে নিতে পারেন তবে এটি তার জন্য একটি বড় জয় হবে। এই লড়াইটা ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যদিকে, ২০১৯-এর নির্বাচনে বিহারে ৪০টি আসনের মধ্যে ৩৯টিতে জিতেছিল এনডিএ। সেটা যেমন অপ্রত্যাশিত ছিল, তেমনই ২০১৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলও। সে সময় অনেকেই অঙ্ক কষেছিলেন যে বিজেপি জয়ী হবে। তবে ভোটগণনা শুরুর দু’ঘণ্টা পরেই দেখা যায় নীতীশ কুমার এবং লালুপ্রসাদের মহাগঠবন্ধন জিতছে। এবার অনিশ্চয়তা বাড়িয়েছে নীতীশ কুমার এবং তাঁর দলের শিবির পরিবর্তন। অনেক ভোটার মনে করেন যে, নীতীশ কুমার যখন আরজেডি-কংগ্রেস মহাগঠবন্ধনের সঙ্গে ছিলেন তখন সেটা রাজ্যের জন্য ভাল ছিল। তাঁর এনডিএ-তে ফেরা বিহারকে সাহায্য করবে না। ভোটবাক্সে এর প্রতিফলন ঘটলে এনডিকে ৪০০-র অনেক দূরে থামতে হবে।
এদিকে, মহারাষ্ট্র লোকসভায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক সাংসদ পাঠায়। ২০১৪ সাল থেকে এনডিএর জন্য এটি একটি সহজ রাজ্য থাকলেও মারাঠা ভূমের পরিস্থিতি এখন আর বিজেপির জন্য তেমন অনুকূল নেই। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে মহারাষ্ট্রের রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দল, দুটিই পরিবর্তিত হয়েছে। সেবার মহারাষ্ট্রের ৪৮টি আসনের মধ্যে ৪১টি এনডিএকে দিয়েছিল, যখন বিজেপি এবং উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা জোটে লড়াই করছিল। এবার সমীকরণ পালটেছে। ফলে যে কোনও মুহূর্তে খেলা ঘুরে যাওয়া সম্ভব।