পতঞ্জলি সংস্থার ‘অসত্য বিজ্ঞাপন’ মামলায় আদালতের নির্দেশ অমান্য করা নিয়ে সম্প্রতি সুপ্রিম-ভর্ৎসনার মুখে পড়েছেন যোগগুরু রামদেব। তাঁকে ‘ফল ভোগ করার জন্য তৈরি থাকার’ কথাও জানিয়ে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। প্রসঙ্গত, এক ওষুধেই করোনা নিরাময়ের দাবি করে শোরগোল ফেলে দিয়েছিল রামদেবের সংস্থা পতঞ্জলি। করোনার তৃতীয় ঢেউ ভারতে আছড়ে পড়ার আগে ‘করোনিল’ নামক ওই ওষুধ বাজারে এনেছিল তারা। বিভিন্ন জায়গায় বিজ্ঞাপন দিয়ে দাবি করা হয়, ‘করোনিলই কোভিড-১৯-এর প্রথম প্রমাণভিত্তিক ওষুধ’। এই দাবি নিয়েই তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়।
রামদেবের কোম্পানির তৈরি ওযুধের বিজ্ঞাপন মানুষের মনে বিভ্রান্ত তৈরি করছে, এমনই দাবি তোলে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)। আইএমএ-র আরও অভিযোগ ছিল, পতঞ্জলির বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা এবং চিকিৎসককে অসম্মান করা হয়েছে। একই সঙ্গে আইএমএ-র অভিযোগ ছিল, কোভিড প্রতিরোধী না-হওয়া সত্ত্বেও শুধু করোনিল কিট বিক্রি করেই আড়াইশো কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছিল রামদেবের পতঞ্জলি। আর তার জন্য ‘বিভ্রান্তিকর এবং মিথ্যা’ বিজ্ঞাপনী প্রচার চালানো হয়েছিল। এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা গড়ালে শুনানি চলাকালীন একাধিক বার প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় রামদেব এবং পতঞ্জলির ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) তথা রামদেবের সহযোগী আচার্য বালকৃষ্ণকে।
আদালতে উপস্থিত হয়ে ক্ষমাও চাইতে হয়েছে রামদেব এবং বালকৃষ্ণকে। শুধু তা-ই নয়, আদালত অবমাননার অভিযোগও ওঠে তাঁদের বিরুদ্ধে। সেই মামলায় হলফনামা দিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চান রামদেবরা। যদিও আদালত তাঁদের ক্ষমা গ্রহণ করেনি। গত বুধবার এই মামলা শুনানিতে শীর্ষ আদালত মন্তব্য করে, ‘আমরা অন্ধ নই’। পুরো বিষয়টি নিয়ে তারা উদার হতে চায় না বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। পাশাপাশি, সুপ্রিম কোর্ট এ-ও জানিয়েছিল, পুরো বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রের উত্তরে সন্তুষ্ট নয় শীর্ষ আদালত। উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে করোনিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন।
আইএমএ দাবি করে, স্বাস্থ্য মন্ত্রীর উপস্থিতিতে পতঞ্জলি যে ওষুধ বাজারে আনে তাতে হু-এর মিথ্যা শংসাপত্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে এই ঘটনার ব্যাখ্যারও দাবি করেছিল আইএমএ। আবার, লোকসভায় লিখিত জবাবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী ভারতী প্রবীণ পাওয়ার জানিয়েছিলেন, আয়ুষ মন্ত্রকের তরফে দেওয়া ছাড়পত্রে করোনিল ওষুধকে ‘ইমিউনিট বুস্টার’-এর পরিবর্তে ‘করোনা চিকিৎসার ওষুধ’ হিসেবেই উল্লেখ করা হোক, এই মর্মে সম্প্রতি একটি আবেদন করে পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ। তার পরই মন্ত্রকের তত্ত্বাবধানে গঠিত ওই পর্যালোচনা কমিটি সমস্ত রিপোর্ট খতিয়ে দেখে জানিয়েছে, করোনিল ওষুধকে কোভিডের চিকিৎসায় সহযোগী ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
গত বছর নভেম্বরে পতঞ্জলিকে বিভিন্ন রোগের প্রতিকার হিসাবে নিজেদের ওষুধ সম্পর্কে ‘বিভ্রান্তিকর এবং মিথ্যা’ প্রচার করার বিষয়ে সতর্ক করেছিল শীর্ষ আদালত। জরিমানা হতে পারে বলেও মৌখিক ভাবে জানানো হয়েছিল। চলতি বছরে ১৫ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট একটা বেনামি চিঠি পায়। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের উদ্দেশে সেই চিঠি লেখা হয়েছিল। সেখানে দাবি করা হয়েছিল, আদালতের নির্দেশের পরেও পতঞ্জলি বিজ্ঞাপন বন্ধ করেনি। এরপরই পতঞ্জলির বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশ অমান্য করার অভিযোগ ওঠে। সেই মামলায় রামদেবকে তলবও করা হয়েছিল।
ফেব্রুয়ারি মাসে শীর্ষ আদালত ‘পতঞ্জলি’কে সমস্ত বৈদ্যুতিন মাধ্যমে এবং সংবাদপত্রে সব ‘মিথ্যা’ বিজ্ঞাপন বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল। আদালতে উপস্থিত হয়ে হাতজোড় করে ক্ষমা চান রামদেব। পরে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে হলফনামা জমা দেন তিনি। যদিও রামদেবের ক্ষমা প্রত্যাখ্যান করে সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে উত্তরাখণ্ড সরকারকেও ভর্ৎসনা করে বিচারপতি হিমা কোহলির ডিভিশন বেঞ্চ। শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, উত্তরাখণ্ড সরকারের লাইসেন্সিং বিভাগের তিন জন আধিকারিককে একসঙ্গে বরখাস্ত করা উচিত। ডিভিশন বেঞ্চের কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চান উত্তরাখণ্ডের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)-এর জয়েন্ট ডিরেক্টর মিথিলেশ কুমার।