লোকসভা ভোটের মুখে ফের মোদী সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের অর্থনীতিবিদ স্বামী পরকলা প্রভাকর। সম্প্রতি একটি টিভি সাক্ষাৎকারে নির্বাচনী বন্ড ‘দুর্নীতি’ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি এই দাবি করেছেন যে, নির্বাচনী বন্ড বিশ্বের বৃহত্তম দুর্নীতি। এর পর স্বয়ং নির্মলার বক্তব্যও আলোড়িত করেছে রাজনৈতিক মহল এবং বিজেপিকে। তিনি দলকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে, লোকসভা ভোটে লড়াই করার টাকা নেই তাঁর কাছে।
সময়ের নিরিখেই প্রভাকর এবং নির্মলার বক্তব্যকে জুড়ে দেখতে চাইছেন অনেকে। বিজেপি নেতারাও ঘরোয়া আলোচনায় মানছেন, ভোটের মুখে নির্মলা এবং তাঁর স্বামীর বক্তব্য দলের জন্য ‘অস্বস্তিকর’। বিরোধী শিবিরের নেতাদেরও বক্তব্য, অর্থমন্ত্রীর স্বামী যে ভাবে মোদী সরকারের দিকে দুর্নীতির আঙুল তুলেছেন এবং খোদ অর্থমন্ত্রী যে ভাবে লোকসভা নির্বাচনে দাঁড়াবেন না বলেছেন, তার মধ্যে একটা দায় ঝেড়ে ফেলা বা সরে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। যা মোদী জমানায় কখনও হয়নি। এদিকে, নির্মলার স্বামী অতীতেও মোদী সরকারের একাধিক আর্থিক নীতির সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু কখনও দুর্নীতির অভিযোগ তোলেননি।
বুধবার তিনি সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ‘নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে যে দুর্নীতি হয়েছে, তা সকলে দেখতে পেয়েছেন। সকলে এটি বুঝতে পেরেছেন, এটি শুধু ভারত নয়, সারা পৃথিবীর সবচেয়ে ব়ড় দুর্নীতি। এটা বিজেপিকে ভোগাবে বলেই মনে হয়। এই দুর্নীতির কারণে কেন্দ্রের বর্তমান সরকারকে ভোটারেরা শাস্তি দেবেন।’ এর পরেই জানা যায়, একটি বেসরকারি অনুষ্ঠানে লোকসভা ভোটে না দাঁড়ানো নিয়ে মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। নির্মলা জানান, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা তাঁকে অন্ধ্রপ্রদেশ কিংবা তামিলনাড়ু থেকে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু ভোটে লড়ার ‘যথেষ্ট টাকা নেই’, এই যুক্তি দিয়ে সেই প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছেন তিনি।
তথ্য বলছে, নির্বাচনী বন্ডের বিষয়টি শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালে। তখন অর্থমন্ত্রী ছিলেন অধুনাপ্রয়াত অরুণ জেটলি। রাজনৈতিক মহলের অনেকের বক্তব্য, বন্ড নিয়ে নির্মলার স্বামী যা বলেছেন, তার মধ্যে ‘অন্তর্নিহিত বার্তা’ও রয়েছে। তিনি এ-ও বুঝিয়ে চেয়ে থাকতে পারেন যে, যাকে তিনি ‘পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দুর্নীতি’ বলে অভিহিত করেছেন, তার গোড়াপত্তন হয়েছিল অর্থমন্ত্রী জেটলির আমলে। স্বামী বলেছেন, বন্ড নিয়ে ভোটে ভুগতে হবে বিজেপিকে। আর তার পরে নির্মলা বলেছেন, তিনি লোকসভায় দাঁড়াবেন না। এই দুই বক্তব্যকে জুড়ে দেখতে এবং দেখাতে চাইছেন অনেকে।
তাছাড়া অর্থসঙ্কটের জন্য ভোটে না দাঁড়ানোর যে যুক্তি নির্মলা দিয়েছেন, তা খুবই ছেঁদো কথা হয়ে গিয়েছে। কারণ ভোটে লড়ার টাকা দলই দেয়। বাবুল সুপ্রিয় মোদী মন্ত্রিসভায় পদ খোয়ানোর কয়েক মাস পরে তৃণমূলে যোগ দিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হওয়া শুরু করেছিলেন। কিন্তু মন্ত্রিত্বে থাকা অবস্থায় কেউ তা করেননি। বিগত ১০ বছরে কোনও মন্ত্রীর পরিবারের ঘনিষ্ঠ বৃত্তেরও কেউ এই ধরনের অভিযোগ তোলেননি, যা নির্মলার স্বামী বলেছেন। এক কথায় তা বেনজির।
