মুখ্যমন্ত্রী পদে যোগী আদিত্যনাথকে বেছে নেওয়ার পর থেকেই নানা ইস্যুতে দলের বিরুদ্ধে মুখ খোলা শুরু করেন তিনি। কৃষক আন্দোলন থেকে বেকারত্ব, জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি এবং কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে বারে বারে মুখ খুলে দলের অস্বস্তি বাড়িয়েছেন। এবার আর সেই বরুণ গান্ধীকে প্রার্থী করেনি বিজেপি। পিলভিটে বিজেপির প্রার্থী এবার উত্তর প্রদেশের মন্ত্রী জীতিন প্রসাদ।
কৃষক আন্দোলন, দ্রব্যমূল্য, বেকারি বৃদ্ধি-সহ নানা জনস্বার্থবাহী ইস্যুতে দলের বিরুদ্ধে মুখ খোলা বরুণকে এবার যে টিকিট দেওয়া হবে না তা স্পষ্ট ছিল প্রার্থী তালিকা ঘোষণার আগেই। তবে নানা মহলে জল্পনা ছিল টিকিট না পেয়ে বিদ্রোহ করবেন বরুণ। সে পথে এখনও না হাঁটলেও বৃহস্পতিবার সকালে পিলিভিটবাসীর উদ্দেশে লেখা খোলা চিঠিতে ইঙ্গিত দিয়েছেন, আম-আদমির জ্বালা-যন্ত্রণার কথা বলাতেই তাঁকে শাস্তি পেতে হল। টিকিট না পাওয়ার সিদ্ধান্তকে ঘুরিয়ে সাজা হিসাবেই দেখাতে চেয়েছেন মানেকা পুত্র।
২০০৯ সাল থেকে পিলিভিটের সাংসদ বরুণ। রাজনীতিতে হাতেখড়ি ১৯৯৯-এ। সে বার পিলিভিটে বিজেপির প্রার্থী হন তাঁর মা মানেকা। প্রয়াত সঞ্জয় গান্ধীর স্ত্রী মানেকা স্বামীর মৃত্যুর অল্পদিন পরই শাশুরি ইন্দিরার সঙ্গে অশান্তির জেরে শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যান। বরুণ চিঠিতে লিখেছেন, ১৯৮৩ সালে মায়ের হাত ধরে প্রথম পিলভিট আসি। বয়স আমার তখন মাত্র তিন। সেই থেকে এই এলাকার মানুষকে নিয়েই আমার বৃহত্তর পরিবার।
১৯৯৯ এবং ২০০৪-এর লোকসভা ভোটে বিজেপির প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা বরুণকে পরের ভোটে পিলভিটে প্রার্থী করেন অটল বিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আডবানিরা। সেই থেকে দলের গুরুত্বপূর্ণ মুখ হয়ে ওঠেন উত্তর প্রদেশে। একটা সময় মনে করা হত বিজেপি ফের ক্ষমতায় এলে বরুণ হবেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু ২০১৭-তে সেই স্বপ্ন ভঙ্গ হয় যোগী আদিত্যনাথকে দল মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য বেছে নিলে। অন্যদিকে, নানা সময় আলোচনায় এলেও তাঁকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাতেও নেননি নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহেরা।
বিজেপি সূত্রের খবর, বাজপেয়ী, আডবানিদের সময়ে দলে গুরুত্ব পাওয়া বরুণের ব্যাপারে সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নেন মোদী। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, গান্ধী পরিবার ছেড়ে আসা লোকজনের জন্য বিজেপিতে কোনও কোটা থাকতে পারে না। ওটা কোনও যোগ্যতার মাপকাঠি নয়। তাই ২০১৯-এর ভোটের পর মানেকা গান্ধীকেও আর মন্ত্রিসভায় রাখেননি মোদী। দু-বছর আগে দলের জাতীয় কর্মসমিতি থেকে এই মা ও ছেলেকে ছেঁটে দেন মোদী-শাহ-নাড্ডা জুটি।
এবার মানেকাকে টিকিট দেওয়া হলেও বরুণকে বাদ দিয়েছে দল। যদিও বৃহস্পতিবারের খোলা চিঠির অন্তর্নিহিত বার্তা বিরোধীরা হাতিয়ার করবে সন্দেহ নেই। বরুণ তাঁর সাংসদ এলাকার বাসিন্দাদের উদ্দেশে লিখেছেন, আম-আদমির কথা বলব বলে রাজনীতিতে এসেছিলাম। আজীবন মানুষের স্বার্থে কথা বলে যাব। তার জন্য সাজা পেতে হলে হবে। লড়াই করব, আপনাদের পাশেও থাকব। আমার দুয়ার আগের মতোই উন্মুক্ত থাকবে।