এবার বাংলার মুকুটে যোগ হল আরও একটি নতুন পালক। সুন্দরবনের মধু বা উত্তরবঙ্গের কালোনুনিয়া চালের পর এবার জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশনস বা জিআই ট্যাগ পেল ‘বাংলার মসলিন’। একটি বেসরকারি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি সপ্তাহের শুরুতেই জিআই কর্তৃপক্ষের তরফে এই সুখবর দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারকে। এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে বাংলা যে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছিল, তা সাফল্য পেল। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মসলিন তৈরি হলেও সূক্ষ্মতার জন্য বিখ্যাত বাংলার মসলিন। বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্পের একটি অন্যতম প্রোডাক্ট এটি। শোনা যায়, একটা সময় রাজা মহারাজাদের অত্যন্ত পছন্দের ছিল এই মসলিন। তবে ইংরেজরা দেশের শাসনক্ষমতা দখলের পর ধীরে ধীরে মসলিন বাংলার বুক থেকে হারিয়ে যেতে শুরু করে। স্বাধীনতার পর ফের তা ঘুরে দাঁড়ায়। বিভিন্ন সময় মসলিনের উন্নয়নের জন্য সরকারের তরফের বিবিধ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর সেই কারণেই বাংলার মসলিন নতুন এক মাত্রায় পৌঁছে গিয়েছে। অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে বাংলার মসলিনের পার্থক্যও রয়েছে বিস্তর। অন্যান্য রাজ্যের মসলিন যেখানে মাত্র ১৫০ কাউন্টের, সেখানে বাংলার মসলিনের অধিকাংশই ৩০০ থেকে ৫০০ কাউন্টের।
প্রসঙ্গত, মসলিনের জিআই তকমার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা চালাচ্ছিল বাংলা। অশেষে এল সাফল্যও। বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি দফতরের তত্ত্বাবধান কেন্দ্রের কাছ থেকে মিলল জিআই স্বীকৃতি। সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গ খাদি ও গ্রামীণ শিল্প পর্ষদের তরফে ২০১৯ সালে বাংলার মসলিনের জিআই স্বত্বের জন্য আবেদন জানান হয়। শোনা যায়, মুঘলদের এই শাড়ি খুবই প্রিয় ছিল। মুঘলরা বাংলার মসলিনের ‘মল মল’ নামকরণ করে। এছাড়া ‘গোসামা অব দি ইস্ট’, ‘দি স্কিন অব দ্য মুন’ সহ আরও বেশকিছু নামকরণও করা হয়েছে বাংলার এই বিখ্যাত বস্ত্র উপকরণের। রাজ্যে মসলিন উৎপাদনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলি হল মুর্শিদাবাদ, মালদা, নদিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম, হুগলি, হাওড়া, ঝাড়গ্রাম ও পূর্ব বর্ধমান। বাংলার মসলিন জিআই তকমা পাওয়ায় বিশেষভাবে উপকৃত হবেন এর উৎপাদনকারীরা এবং এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য মানুষেরা, সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন রাজ্যের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দফতরের মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস।