বেজে গিয়েছে ভোটের দামামা। কার্যত দোরগোড়ায় লোকসভা নির্বাচন। ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হওয়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। এমতাবস্থায় জোরকদমে রাজ্যে প্রচারে নেমে পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস-সহ সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলি। তৃণমূল সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি-বিরোধিতার আওয়াজ তুলেছেন। গত রবিবার প্রার্থীতালিকাও ঘোষণা করেছে তৃণমূল। এবার উত্তর বাংলার চা-বাগান এলাকা থেকে প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, চা শ্রমিকদের কল্যাণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন হাজার কোটি টাকা। এখন সেই টাকার বরাদ্দ কোথায় গেল? বলে প্রশ্ন তুলে দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে এমন প্রশ্ন তুলে দেওয়ায় বিজেপি বিপাকে পড়ল এখানে বলে মনে করা হচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। তার পরই অভিষেকের প্রথম সভা ছিল ময়নাগুড়িতে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন জলপাইগুড়ির লোকসভা প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায়, কোচবিহারের প্রার্থী জগদীশ বসুনিয়া, আলিপুরদুয়ারের প্রার্থী প্রকাশ চিক বরাইক, দার্জিলিঙের প্রার্থী গোপাল লামা। এখানেই প্রচারের সুর বেঁধে দেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
পাশাপাশি, বৃহস্পতিবারের সভায় বাংলাকে বঞ্চনার অভিযোগ তোলেন অভিষেক। তখনই তিনি বলেন, “মোদী এখানে এসে বলেছিলেন, চা–শ্রমিকদের কল্যাণে নাকি হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। কোথায় সেই টাকা? আসলে মুখে বলে, কাজ করে না। আমি মালবাজারে চা–শ্রমিকদের নিয়ে সভা করেছিলাম। আর মজুরি বৃদ্ধির কথা বলেছিলাম। সেই মজুরি কিন্তু বেড়েছে।” অন্যদিকে লোকসভা নির্বাচনের আগে চা শ্রমিকদের মজুরিতে কিছুটা বাড়বে বলে মনে করেছিলেন শ্রমিকরা। কিন্তু সেসব কিছু হয়নি। এমনকী এই নিয়ে কোনও ঘোষণাও করা হয়নি। তবে চা-শ্রমিকদের জন্য কাজ করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস সরকার। মজুরি বৃদ্ধি করা হয়েছে। পাট্টা জমি দেওয়া হয়েছে। সামাজিক প্রকল্পে যুক্ত করা হয়েছে। তবে আরও মজুরি বাড়ানোর কথা চলছে। এই বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের এক চা-শ্রমিক নেতা জানান যে, ন্যূনতম মজুরি চুক্তি নিয়ে কথাবার্তা চলছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “তিন হাজার কোটি টাকা দিয়ে রামমন্দির করা গেল, কিন্তু আপনার মাথার উপর ছাদ হল কি? রাজ্য সরকার তো জল্পেশ মন্দিরের পরিকাঠামোয় ১০ কোটি টাকা খরচ করেছে। আমরা কি সেই কথা বলে ভোট চাইছি? বাংলাকে ১০০ দিনের কাজ করিয়ে টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র দু’বছর। আবাস যোজনার টাকা আটকে রেখেছে। ১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকা রাজ্য সরকার দিয়ে দিয়েছে।” আগামী ১লা মে তারিখের মধ্যে আবাসের টাকা না দিলে তা দেবে রাজ্য সরকার, এমন ঘোষণাও করা হয়েছে। এই বিষয়েও বিজেপিকে কড়া কটাক্ষে বিঁধেছেন অভিষেক। “বিজেপির কাছে সব আছে ইডি, সিবিআই, আয়কর, কেন্দ্রীয় বাহিনী, বিচারব্যবস্থা, সংবাদমাধ্যম, টাকা, মেশিনারি। তবু ওরা বাংলায় এঁটে উঠতে পারছে না। কারণ মানুষ তৃণমূলের সঙ্গে আছে। আবার খুব শীঘ্রই দেখা হবে। আজকে এখানে খুঁটিপুজো করে গেলাম, মে মাসের শেষে বিরোধীদের বিসর্জন দেখিয়ে দেব”, স্পষ্ট জানিয়েছেন তিনি।