দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর সিএএ পাশ করিয়েছিল কেন্দ্রের মোদী সরকার। অবশেষে বিল থেকে আইনে পরিণত হওয়ার প্রায় সাড়ে চার বছর পরে সোমবার দেশে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) জারি করার কথা জানিয়েছে তারা। লোকসভা ভোটের আগে কেন্দ্র সরকারের এই পদক্ষেপ নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। বাংলার শিল্প-সংস্কৃতি জগতের বিশিষ্টজনেদের কপালেও চিন্তার ভাঁজ।
নাট্য নির্দেশক ও পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘ভোটের আগে একের পর এক ‘হিন্দুত্ববাদী’ কার্ড ওরা খেলতে শুরু করেছে। তবে প্রতিবাদের স্বর যদি ওঠে, আগের মতোই আমি সেখানে থাকব। কারণ, আগে যদি বিরোধিতা করে থাকি, তা হলে আগামী দিনেও সেটাই করব।’ তাঁর কথায়, ‘নির্বাচনের আগে এখন রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন তুরুপের তাস খেলতে চায়। সকলেই আটঘাট বেঁধে ময়দানে নামে। কিন্তু সেই তাস সিএএ-এ হলে, সেটা মারণাস্ত্র!’
কোনও ব্যক্তির দেশে পুনর্বাসন যদি নিয়ম মেনে হয়, তা হলে তার মধ্যে কোনও দোষ দেখছেন না পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। কিন্তু তাঁর দাবি, ‘সেই প্রক্রিয়া যদি ধর্মের ভিত্তিতে করা হয়, সেখানে আপত্তি উঠতে বাধ্য। এটা অত্যন্ত বৈষম্যমূলক একটা পদক্ষেপ।’ সিএএ-র মাধ্যমে আসন্ন নির্বাচনের আগে মেরুকরণকে স্পষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মনে করেন কমলেশ্বর। তাঁর যুক্তি, ‘সিএএ ঘোষণা করে দেশের সীমান্তবর্তী ভোটকেন্দ্রের বাসিন্দাদের কাছে কী বার্তা পাঠাতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার, সেটাও স্পষ্ট হয়ে গেল।’
কমলেশ্বরের মতে, অর্থনৈতিক বিপর্যয়, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব দেশে একটা ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। পাশাপাশি, নির্বাচনী বন্ড নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ। সব মিলিয়ে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল চাপে পড়়েছে বলেই এখন সিএএ-কে হাতিয়ার করা হয়েছে। আবার, নাট্য নির্দেশক ও অভিনেতা কৌশিক সেনের মতে, ‘নির্বাচনী বন্ড নিয়ে স্টেট ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রকাশ্যে এসেছে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনার অরুণ গয়াল পদত্যাগ করেছেন। ফলে শাসকদলের উপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। তাই গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় থেকে জনগণের দৃষ্টি ঘোরাতেই এখন সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনকে হাতিয়ার করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’