সেই একুশের ভোটযুদ্ধে ভরাডুবির পর থেকেই শনির দশা শুরু হয়েছে বঙ্গ বিজেপির। দলত্যাগের হিড়িক তো ছিলই। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের আগে বারবার প্রকাশ্যে এসে পড়ছে দলের অন্তর্কলহও। সদ্যই যেমন আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী হতে না পেরে শুভেন্দু অধিকারী এবং মনোজ টিগ্গার বিরুদ্ধে খুব উগরে দিয়েছেন বিদায়ী সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জন বার্লা। আর এবার রানাঘাটে প্রার্থী নাপসন্দ দলীয় কর্মীদের। রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ তথা ওই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকারের বিরোধিতায় পোস্টার পড়ল নদিয়ায়। পোস্টারে জগন্নাথকে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত, অযোগ্য এবং চরিত্রহীন’ বলে আক্রমণ করা হয়েছে। বিজেপি সাংসদের দাবি, পোস্টার দিয়েছেন সদ্য দলত্যাগী বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারীর অনুগামীরা। তবে পোস্টার মারার দায় নিতে রাজি নন মুকুটমণি।
প্রসঙ্গত, রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে মতুয়া প্রার্থী হিসেবে মুকুটমণির নাম নিয়ে শুরু হয়েছিল আলোচনা। কিন্তু রানাঘাট কেন্দ্রের বর্তমান সাংসদ জগন্নাথকেই দ্বিতীয় বার মনোনয়ন দেয় বিজেপি। আর তার পরেই বিক্ষোভ দেখায় বিজেপির একটি গোষ্ঠী। বিক্ষুব্ধরা মুকুটমণির অনুগামী বলে দলীয় সূত্রের দাবি। মুকুটমণি অবশ্য আর বিজেপিতে নেই, তিনি যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। তবে এবার বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা কার্যালয়ের সামনে পোস্টার পড়ল জানা জগন্নাথের বিরুদ্ধে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিজেপি কর্মী বলেন, ‘পাঁচটা বছর এক জন চরিত্রহীন দুর্নীতিগ্রস্ত সাংসদকে সহ্য করেছি। এ বারও তাঁকেই প্রার্থী করা হল। এই পরিস্থিতিতে আমরা দল ছাড়তে বাধ্য। দলের নেতাদের কাছে সেই বার্তা দিতেই পোস্টার।’
পোস্টারে রানাঘাটের সাংসদ তথা এ বারের প্রার্থীকে দুর্নীতিগ্রস্ত, ‘অযোগ্য এবং চরিত্রহীন’ বলে দাবি করা হয়েছে। তাঁর হাত থেকে নদিয়াকে বাঁচানোর আবেদনও করা হয়েছে। স্বভাবতই, এই পোস্টার ঘিরে অস্বস্তিতে বিজেপির জেলা নেতৃত্বও। এ’ প্রসঙ্গে জগন্নাথ বলেন, ‘প্রার্থী না হতে পারার আক্ষেপে অনেকের ভীমরতি হয়েছে। এ সব নোংরা রাজনীতির কোনও মানেই হয় না।’ মুকুটমণির পাল্টা জবাব, ‘বিজেপি কর্মীরা খুব ভাল জানেন, কার চরিত্র কেমন। দুর্নীতিগ্রস্তকে প্রার্থী করা হলে অনেকেই মেনে নেবেন না। সেটাই স্বাভাবিক।’ তৃণমূলের সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরা ব্রিগেডের জনগর্জন সভার প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত। বিজেপি দলেও কিছু ভাল লোক আছেন, যাঁরা পোস্টারে কিছু সত্যি কথা লিখে সাঁটিয়ে দিয়েছেন। এখানে অযথা আমাদের গালমন্দ করে বিজেপি নিজের কোন্দলকে ঢাকা চাপা দিতে পারবে না।’