সেই একুশের ভোটযুদ্ধে ভরাডুবির পর থেকেই শনির দশা শুরু হয়েছে বঙ্গ বিজেপির। দলত্যাগের হিড়িক তো ছিলই। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের আগে বারবার প্রকাশ্যে এসে পড়ছে দলের অন্তর্কলহও। সদ্যই যেমন আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী হতে না পেরে শুভেন্দু অধিকারী এবং মনোজ টিগ্গার বিরুদ্ধে খুব উগরে দিয়েছেন বিদায়ী সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জন বার্লা। এবার রানাঘাটেও প্রকাশ্যে বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্ব।
গত লোকসভা নির্বাচনে তিনিই ছিলেন রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে বিজেপির প্রথম পছন্দ। রাজ্য সরকারি হাসপাতালের কাজ থেকে তিনি ছাড়া না পাওয়ায় শেষ মুহূর্তে শিকে ছেঁড়ে জগন্নাথ সরকারের। এবার কিন্তু সেই মুকুটমণি অধিকারীর নাম বিবেচনাতেই রাখেনি তাঁর দল, প্রথম দফাতেই রানাঘাটে ফের প্রার্থী করা হয়েছে জগন্নাথকে। আর তাতেই ক্ষোভে ফুঁসছেন রানাঘাট দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক মুকুট।
গত ২ মার্চ নরেন্দ্র মোদীর কৃষ্ণনগর সফরের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রথম দফায় রাজ্যের ২০ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে বিজেপি। দলের রাজ্য সহ-সভাপতি জগন্নাথ তাঁদের অন্যতম। বুধবার মুকুটমণি দাবি করেন, ‘রানাঘাট কেন্দ্রে বিজেপি যোগ্য লোককে প্রার্থী করেনি। হার নিশ্চিত।’ যা শুনে জগন্নাথ পাল্টা বলেন, ‘আমাদের দল কাজ দেখে প্রার্থী করে। গত পঞ্চায়েত ভোটে আমার এলাকা থেকেই একমাত্র পঞ্চায়েত সমিতি দখলে এসেছে। কার কী যোগ্যতা তা ভোটেই বোঝা যাবে।’
উল্লেখ্য, মতুয়া-নমঃশূদ্র অধ্যুষিত দক্ষিণ নদিয়ায় তরুণ ও শিক্ষিত মতুয়া-মুখ হিসাবে এক সময়ে মুকুটকে তুলে এনেছিল বিজেপি। যদিও পরে নেতৃত্বের একাংশের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়ে। তবে নদিয়া দক্ষিণের বেশ কিছু যুব পদাধিকারী মুকুটকে প্রার্থী হিসাবে চেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টও করেছিলেন। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন তাঁকে প্রার্থী করা হল না? মুকুটমণির জবাব, ‘কেন আমায় প্রার্থী করা হল না সেটা বঙ্গ বিজেপির নেতৃত্ব এবং সঙ্ঘের (আরএসএস) ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা বলতে পারবেন।’
বর্তমানে নিজেকে তিনি দলীয় কার্যকলাপ থেকে গুটিয়ে নিয়েছেন বলেও দাবি করেছেন মুকুটমণি। এই পরিস্থিতিতে তিনি যদি অন্য পথে পা বাড়ান, তাঁর নিকটজনেরা অন্তত বিস্মিত হবেন না। মুকুটের পরবর্তী রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিয়ে বাতাসে নানা সম্ভাব্য খবরও উড়ছে। শোনা যাচ্ছে, কঠিন ঠাঁই রানাঘাটে মতুয়া-মন জিততে তাঁকেই প্রার্থী করতে চাইছে তৃণমুল। দলের একাংশের দাবি, মুকুটকে প্রার্থী করা হলে বিজেপির হাত থেকে রানাঘাট কেন্দ্র পুনরুদ্ধার সহজ হবে।