এবার শহরের গরিব মানুষের স্বপ্নপূরণের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। প্রসঙ্গত, কলকাতার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে দীর্ঘদিনের ভাঙাচোরা বিপজ্জনক হয়ে যাওয়া ঘরগুলি ভেঙে সেই জমিতেই সম্পূর্ণ নতুন বহুতল তৈরি হচ্ছে। ওই ভাঙা ঘরের শ্রমজীবী বাসিন্দারাই পাবেন নতুন ফ্ল্যাট। প্রতি ফ্ল্যাটে ঘরের সঙ্গে থাকছে শৌচালয়। সম্পূর্ণ সরকারি খরচেই এই মডেল অভিযানটি হতে চলেছে। কাজ করছে কেএমডিএ। চূড়ান্ত অস্বাস্থ্যকর এবং বিপজ্জনক জায়গায় কোনওক্রমে মেরামত করে থাকা যে পরিবারগুলির অভ্যাস বা বাধ্যতা, এখন চোখের সামনে নতুন বহুতল উঠতে দেখে তাঁরা যারপরনাই আপ্লুত। প্রথম বহুতলটির ফ্ল্যাটের চাবি হস্তান্তরের প্রক্রিয়াও শুরুর মুখে। এমএমডি ব্যারাক বলে পরিচিত ওই ভঙ্গুর বিপজ্জনক ঘরগুলিকে নতুন চেহারা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে ২০১০ সালে কাজ শুরু করেন এলাকার বাসিন্দা প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ। তখন কাউন্সিলর ছিলেন ডেপুটি মেয়র ফরজানা আলম। নানা কারণে কাজ থমকে যায়। ২০২১ সালে আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তী কাউন্সিলর হয়ে আসার পর এই চেষ্টা আবার নতুন করে শুরু হয়। একদিকে প্রকল্পটি সরকারি কর্তৃপক্ষকে বোঝানো, অন্যদিকে আবাসিকদের রাজি করানো, কাজ ছিল যথেষ্ট কঠিন। অয়ন সে কাজ সাফল্যের সঙ্গে করেন। অয়ন এবং কুণাল বাসিন্দাদের ঘরে ঘরে গিয়ে বোঝান যে এই প্রকল্পে তাঁদের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত।
পাশাপাশি, কেএমডিএ-র অফিসাররাও গভীরভাবে জনসংযোগ করেন। একেকটি অংশ ভাঙার সময় বাসিন্দাদের পাশের ওয়ার্ডে একটি বিকল্প জায়গায় অস্থায়ীভাবে রাখার ব্যবস্থা হয়। কিছু অংশে কুৎসা ছিল যে কোনও বহুতল হবে না। বাসিন্দারা পরে বিপদে পড়বেন। কিন্তু দ্রুততার সঙ্গে কাজ করান অয়ন। নতুন বাড়ি দেখে শুধু বাসিন্দারা নন, খুশি এলাকাবাসীও। অয়ন চক্রবর্তী জানান, প্রকল্প রূপায়ণে আন্তরিক সাহায্য করেছেন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং ফিরহাদ হাকিম। এ বিষয়ে কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন গরিবের আবাসনের ক্ষেত্রে এটি একটি মডেল গড়ে তুলল। এ যেন মহানায়কের স্বপ্ন শেষপর্যন্ত জননেত্রীর টিমের হাত দিয়ে বাস্তবায়িত হল।’’ বহুতলের এই আবাসনের নাম রাখা হচ্ছে ‘সূর্যতোরণ’। ‘সূর্যতোরণ’ ছবিতে গরিব মানুষের ভাঙাচোরা ঝুপড়ির অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের অবসান ঘটিয়ে সেখানেই বহুতলে বহুতলে ফ্ল্যাট নির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন উত্তম কুমার। কেএমডিএ সূত্রে খবর, বিপজ্জনক ঘরগুলির তিনটি ব্লক ভেঙে চারটি বহুতল হচ্ছে। এখানে ভাঙাচোরা ঘরগুলির বাসিন্দারা থাকবেন। বাকি জায়গা কেএমডিএ তাদের নিজস্ব পরিকল্পনামতো ব্যবহার করবে। এর মধ্যে কোনও বেসরকারি উদ্যোগের জায়গা নেই। দীর্ঘদিন ধরে বিপজ্জনক হয়ে থাকা ঘরগুলিতে ঠাসাঠাসি করে বাস করা মানুষগুলি এবার নতুন ফ্ল্যাটে ওঠার অপেক্ষায় মগ্ন।