দেশে ডাক্তারি পড়ার ক্ষেত্রে প্রায় ৭০ শতাংশ আসনই সংরক্ষিত। ফলে মেধাবী হয়েও নিট পাশের পর ভর্তির জন্য তুমুল প্রতিযোগিতায় অতি সামান্য সুযোগ পান সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা। এই কারণ তো রয়েইছে। তার পাশাপাশি ভারতের মেডিক্যাল শিক্ষায় কেন্দ্রীয় সরকারের অদূরদর্শী ও ভ্রান্ত নীতির জন্যও প্রচুর পড়ুয়া এখন ভিনদেশে পড়তে যাচ্ছেন। কিন্তু বিদেশ থেকে স্নাতক পর্যায়ের ডাক্তারি পাশ করার পরে দেশে ফিরে একটি পরীক্ষায় বসা বাধ্যতামূলক। ফরেন মেডিক্যাল গ্র্যাজুয়েট এগজামিনেশন (এফএমজিই) নামের সেই পরীক্ষায় পাশ না করলে ভারতে ডাক্তারি করা যায় না।
গত ডিসেম্বরে ন্যাশনাল বোর্ড অফ এগজামিনেশনস ইন মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এনবিইএমএস) আয়োজিত যে পরীক্ষা হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, বিদেশ থেকে ডাক্তারি পাশ করে আসা প্রার্থীদের মধ্যে ৭৮ শতাংশই এ দেশে ডাক্তারি করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি। ৩৮ হাজার ৩৫৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে অকৃতকার্য হয়েছেন ৩০ হাজার ৪৬ জন। অর্থাৎ, এই দফায় আপাতত মাত্র ৮ হাজার ৩০৯ জন বা ২২ শতাংশ চিকিৎসকই এ দেশে ডাক্তারি করার লাইসেন্স পেলেন। যদিও ২০২২ বাদে গত কয়েক বছরের তুলনায় পাশের হার এবার কিঞ্চিৎ বেশি বলে আবার কিছুটা স্বস্তিও প্রকাশ করছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যকর্তারা। কারণ গত এক দশকে এই পরীক্ষায় গড়ে ১০-২০ শতাংশ প্রার্থীই পাশ করে আসছেন।
চিকিৎসা-শিক্ষা মহলের একটা বড় অংশই মনে করে, ইউকে, ইউএসএ, ক্যানাডা, কিউবা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড বাদে দুনিয়ার আর কোনও দেশে ভারতের চেয়ে উন্নততর, নিদেনপক্ষে সমতুল্য ডাক্তারি পড়ানোর পরিকাঠামো না থাকাতেই এমন শোচনীয় রেজাল্ট হয় এই পরীক্ষায়। ওই ৬টি দেশ থেকে ডাক্তারি পাশ করার পরে অবশ্য দেশে ফিরে ভারতীয় প্রার্থীদের এফএমজিই পরীক্ষায় বসার দরকার পড়ে না। তাঁরা সরাসরি ডাক্তারির লাইসেন্স পেয়ে যান। এবারের এফএমজিই পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যাঁরা বাংলাদেশ, নেপাল, ফিলিপিন্স ও চিন থেকে ডাক্তারি পাশ করেছেন, তাঁদের মধ্যে পাশের হার তুলনায় বেশি। তাঁদের ৩৫ শতাংশ পরীক্ষার্থীই পাশ করেছেন।
সেই তুলনায় পাশের হার বেশ কম রাশিয়া, ইউক্রেন, তাজাকিস্তান, কাজাখস্তান, কির্গিজস্তান, জর্জিয়া, আর্মেনিয়া, বেলারুস ইত্যাদি দেশ থেকে ডাক্তারি পাশ করে আসা প্রার্থীদের। স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশের মত, ভারতের পড়শি দেশগুলিতে রোগভোগের ধরন কাছাকাছি বলে মেডিক্যাল পঠনপাঠনেও সেই রোগগুলি নিয়ে বেশি পড়ানো হয়। তাই সেই সব দেশ থেকে আগত মেডিক্যাল গ্র্যাজুয়েটদের এফএমজিই পারফরম্যান্স তুলনায় ভাল। আবার পূর্ব ইউরোপ এবং মধ্য-পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে ভারতের ডিজিজ প্যাটার্ন মেলে না। ফলে সে দেশে ডাক্তারি শিখে ভারতে ফিরে এসে এফএমজিই পরীক্ষা পাশ করতে বেগ পেতে হয় তাঁদের।