এবার রোপওয়ে প্রকল্পের বিরোধিতায় পথে নামলেন হিমাচল প্রদেশের কুল্লুর বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, মহাদেব রুষ্ট হবেন, তিনি নাকি এসব চান না! শুনতে অবাক হলেও সত্যি। বাসিন্দাদের বক্তব্য, যত দ্রুত সম্ভব এই প্রকল্পের কাজ বন্ধ করা হোক, না হলে অনর্থ কিছু ঘটে যাবে। হিমাচলে সাতটি রোপওয়ে প্রকল্পের কাজ চলছে। তার মধ্যে একটি বিজলি মহাদেব রোপওয়ে প্রজেক্ট। কুল্লু শহরের ঠিক বিপরীতে খারাল পাহাড়ের ওপর অবস্থিত এই মন্দির। বর্তমানে ভক্ত এবং পর্যটকদের কুলু থেকে বাস বা গাড়ি করে চানসারি গ্রামে পৌঁছনোর পর ৩ কিলোমিটার ট্রেক করে সেই মন্দির দর্শনে পৌঁছতে হয়। রোপওয়ে হয়ে গেলে এই শিব মন্দিরে যাওয়া অত্যন্ত সহজ হবে। কিন্তু এই সহজ পথের চক্করে কোনও ক্ষতির সম্মুখিন হতে চাইছেন না কুল্লুর সাধারণ বাসিন্দারা। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে ন্যাশনাল হাইওয়ে লজিস্টিকস ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের সঙ্গে মৌ স্বাক্ষর করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। পর্বতমালা প্রকল্পের আওতায় এই রোপওয়ে প্রজেক্টের কাজ শুরু হয়। শুধুমাত্র বিজলি মহাদেব মন্দিরের রোপওয়ের কাজের জন্য ২০০ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রকল্পের ঘোষণার পর থেকেই স্থানীয়রা এর বিরোধিতা করছেন। রোপওয়ে প্রকল্প নিয়ে সন্তুষ্ট নন মূলত মূলত খারাহাল এবং কাশাভার ফাটির বাসিন্দারা।
প্রসঙ্গত, গত বছর আগস্ট মাস থেকে পথে নেমে কার্যত আন্দোলন করছেন কুল্লুর সাধারণ মানুষের একাংশ। তাঁদের দাবি, বিজলি মহাদেব, হিড়িম্বা দেবী, এবং জামদ্বাগ্নী ঋষি এই প্রকল্পের বিরোধী। তাঁরা চান না এমন কোনও রোপওয়ে হোক। এই বিষয়ে নিয়ে স্থানীয়রা একটি ধার্মিক সভাও করেছিল। তাঁরা জানিয়েছে, গত বছর কুল্লুতে যে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল তা তাঁদের চোখ খুলে দিয়েছে। এখন তাঁরা এমন কোনও কিছুতে সায় দেবেন না যা তাঁদের ভগবানকে রুষ্ট করে। কথিত আছে, দুর্গার অন্য রূপ হিসেবে পূজিত হওয়া দেবী হিড়িম্বা দৈত্যরাজ হিড়িম্বের বোন এবং দ্বিতীয় পাণ্ডব ভীমের স্ত্রী। জামদ্বাগ্নী ঋষিকে কুল্লুর মানালা গ্রাম জামলু দেবতা হিসেবে চেনে এবং তাঁকে বিষ্ণুর অবতার মানা হয়। এই নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন স্থানীয়রা। তাঁদের দাবি, রোপওয়ে না করে মন্দির পর্যন্ত রাস্তা চওড়া করুক সরকার। রাস্তা হলে কর্মসংস্থানও বাড়বে কারণ তার আশেপাশে অনেক গ্রামও রয়েছে। যদিও রোপওয়ে প্রকল্প বন্ধ হওয়া নিয়ে কোনও ইঙ্গিত দেয়নি সরকার। বরং কুল্লুর বিধায়ক সুন্দর ঠাকুর জানিয়েছেন, রোপওয়ে সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্যই হচ্ছে। এই প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে স্থানীয় অর্থনীতি চাঙ্গা হবে, পাশাপাশি পর্যটন স্থান হিসেবেও বিশ্বে আরও বিখ্যাত হয়ে উঠবে হিমাচল, এমনই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।