গত ১ ফেব্রুয়ারি আগামী অর্থবর্ষের অন্তর্বর্তী বাজেট সংসদে পেশ করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। আর তার পরই কর বণ্টন নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন দক্ষিণ ভারতের একাধিক নেতা। মহারাষ্ট্রের উদ্ধব ঠাকরে থেকে শুরু করে কেরালার পিনারাই বিজয়ন কিংবা কর্ণাটকের ডিকে শিবকুমার, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একের পর এক তোপ দেগেছেন সকলে। তাঁদের অভিযোগ, তাঁদের কাছ থেকে যে পরিমাণ কর কেন্দ্র সংগ্রহ করছে, তা তাঁদের ফেরত দেওয়া হচ্ছে না। অসম ভাবে তা বণ্টন করা হচ্ছে। দক্ষিণের করের টাকায় ‘উত্তরের গাড়ি চালাচ্ছে’ কেন্দ্র। আর দক্ষিণ তার প্রাপ্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্র বিভিন্ন রাজ্য তথা দেশের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে দু’ভাবে কর সংগ্রহ করে। একটি হল প্রত্যক্ষ কর। যার অন্যতম উৎস আয়কর। অন্যটি হল পরোক্ষে সংগৃহীত কর। যার প্রধান উৎস জিএসটি। কেন্দ্রের কর সংগ্রহের পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে, দেশের ৭০ শতাংশ প্রত্যক্ষ কর আসে মূলত চারটি রাজ্য থেকে। অর্থাৎ, মোট সরাসরি সংগৃহীত করের ৭০ শতাংশ ওই চার রাজ্যের অবদান। এছাড়া, দেশের পাঁচটি রাজ্য এমন রয়েছে, যাদের কেন্দ্রকে দেওয়া করের পরিমাণ বেশ কম। মোট সংগৃহীত জিএসটি-র খুবই কম অংশ আসে ওই পাঁচ রাজ্য থেকে।
উল্লেখ্য, ২০২২-২৩ সালে কেন্দ্র মোট সাড়ে ১৬ লক্ষ কোটি টাকা কর সংগ্রহ করেছিল। তার মধ্যে মহারাষ্ট্র থেকেই পাওয়া গিয়েছিল ৬.১৪ লক্ষ কোটি টাকা। দিল্লি এবং কর্ণাটক থেকে ২ লক্ষ কোটি, তামিলনাড়ু থেকে এক লক্ষ কোটি টাকা কর এসেছিল। ওই বছরেই জিএসটি বাবদ কেন্দ্র পেয়েছিল ৭.৭ লক্ষ কোটি টাকা। মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, গুজরাত এবং বাংলা থেকে পাওয়া গিয়েছিল মোট জিএসটি-র ৪৫ শতাংশ। ২৮টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে সেই করের টাকার অংশ ভাগ করে দেয় কেন্দ্র। সেই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সবচেয়ে কম কর দিয়ে সবচেয়ে বেশি টাকা ফেরত পায় বিহার। তারা সরকারকে যে পরিমাণ কর দেয়, তার ৭.০৬ গুণ বেশি ফেরত পায়।
একই ভাবে, মহারাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি কর দিয়ে সবচেয়ে কম কর ফেরত পায় কেন্দ্রের থেকে। কর বণ্টনের সময়ে তাদের দেওয়া হয় মাত্র ০.০৮ শতাংশ। কেন্দ্রের কর বণ্টনের তালিকায় দেখা যাচ্ছে, উত্তরপ্রদেশকে ২.৭৩ শতাংশ, আসামকে ২.৬৩ শতাংশ, মধ্যপ্রদেশকে ২.৪২ শতাংশ, ঝাড়খণ্ডকে ২.১৫ শতাংশ, ছত্তীসগঢ়কে ১.৯৬ শতাংশ, হিমাচল প্রদেশকে ১.৪৬ শতাংশ, ওড়িশাকে ১.৩৫ শতাংশ, রাজস্থানকে ১.৩৩ শতাংশ কর ফেরত দেওয়া হয়। এছাড়া উত্তরাখণ্ড ১.২৯ শতাংশ, বাংলা ০.৮৭ শতাংশ, পাঞ্জাব ০.৬৯ শতাংশ, কেরালা ০.৫৭ শতাংশ, অন্ধ্রপ্রদেশ ০.৪৯ শতাংশ, তেলেঙ্গানা ০.৪৩ শতাংশ, তামিলনাড়ু ০.২৯ শতাংশ, গুজরাত ০.২৮ শতাংশ, হরিয়ানা ০.১৮ শতাংশ এবং কর্ণাটক ০.১৫ শতাংশ কর ফেরত পায় কেন্দ্রের থেকে।
কর বণ্টনের এই তালিকায় প্রথম ১১টি রাজ্য ভৌগোলিক ভাবে ভারতের উত্তর দিকে রয়েছে। দ্বাদশ দেশ হিসাবে তালিকায় দক্ষিণ ভারতের প্রথম রাজ্য হল কেরালা। শেষ আটটি রাজ্যের মধ্যে উত্তর ভারতের মাত্র দু’টি রাজ্য— হরিয়ানা এবং গুজরাত। দক্ষিণ ভারতের সব রাজ্যের নামই তালিকায় শেষের দিকে। সবচেয়ে বেশি কর দিয়েও সবচেয়ে কম কর ফেরত যায় তাদের কাছে। আর তাই দক্ষিণের রাজ্যগুলির বক্তব্য, দীর্ঘ দিন ধরে তারা কর বণ্টনে কেন্দ্রের বঞ্চনার শিকার হয়ে আসছে। কেন্দ্র তাদের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। আসলে ভোটব্যাঙ্কই এক্ষেত্রে অন্যতম নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা নিয়েছে। উত্তরপ্রদেশ, বিহারের মতো রাজ্যগুলির জনসংখ্যা দক্ষিণের রাজ্যগুলির চেয়ে বেশি। তাই এই রাজ্যগুলির ভোটব্যাঙ্কের কথা ভেবেই বরাদ্দ খুব একটা কমে না।