এবার সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের কার্যকরী কমিটির বৈঠকে প্রতিবাদী ও বিস্ফোরক মেজাজে দেখা গেল দেশের কিংবদন্তি ফুটবলার বাইচুং ভুটিয়াকে। সচিব পদ থেকে সাজি প্রভাকরণকে ‘ব্রিচ অফ ট্রাস্ট’ ইস্যুতে বরখাস্ত করা হলে কেন সভাপতি কল্যাণ চৌবে এবং কোষাধ্যক্ষ কিপা অজয় পদত্যাগ করবেন না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক। মঙ্গলবার দিল্লীতে বৈঠকে বসেছিল ফেডারেশনের কার্যকরী কমিটির বৈঠক। দীর্ঘদিন পর একজিকিউটিভ কমিটির বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন বাইচুং। “বলা হচ্ছে, বিশ্বাসভঙ্গের জন্য সাজি প্রভাকরণকে সচিব পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কিন্তু সাজি ঠিক এমন কী করেছেন, যাতে বিশ্বাসভঙ্গ হয়েছে, তার কোনও স্পষ্ট জবাব আমাদের দেওয়া হয়নি। আর সাজির বিরুদ্ধে যদি এমন অভিযোগ ওঠে, সভাপতি আর কোষাধ্যক্ষের ক্ষেত্রেও এমন কথা বলা যেতে পারে। কারণ তাঁরা কার্যকরী কমিটিকে অন্ধকারে রেখে নিজেদের মন মতো বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। হঠাৎ করেই এশিয়ান কাপ আয়োজনের দৌড় থেকে ভারত সরে গিয়েছিল। সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কার্যকরী কমিটির সভায় কোনও আলোচনা হয়নি। আবার হঠাৎ করে সন্তোষ ট্রফির ম্যাচ সৌদি আরবে আয়োজন করা হল, সেই সিদ্ধান্তও কমিটিকে না জানিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফলে কমিটির বিশ্বাসভঙ্গের জন্য সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষেরও সরে যাওয়া উচিত”, জানান বাইচুং।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মাসদুয়েক আগে হঠাৎ করেই সাজিকে সচিব পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। বিষয়টি নিয়ে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হয়ে এই সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশ আদায় করেন সাজি। এরপরই ফের সচিব হিসাবে কাজ শুরু করার চেষ্টা করেন সাজি। ফেডারেশনের কাছে সচিবের মেইল আইডি ও পাসওয়ার্ড চেয়েছেন তিনি। তবে এখনও সেই বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি ফেডারেশনের তরফে। এমনকি বরখাস্ত সচিবকে এদিন প্রাথমিকভাবে বৈঠকে উপস্থিত থাকার অনুমতি দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলেন তিন। তাঁর বক্তব্য, “আমার বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ তোলা হয়েছে। কিন্তু কোন কাজটার জন্য এমন অভিযোগ উঠছে, সেটাই তো স্পষ্ট করে জানানো হয়নি আমাকে। পাশাপাশি আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনও সুযোগও আমি পাইনি। আমি বৈঠকে উপস্থিত থেকে নিজের দিকটা তুলে ধরতে চাই।” এরপরই চাপের মুখে সাজিকে বৈঠকে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। তবে দিল্লির বাইরে থাকায় ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠকে যোগ দেন সাজি। এ প্রসঙ্গেও সভাপতিকে নিশানা করেন বাইচুং।
তিনি বলেন, “বছর খানেক আগে আপনারা তিনজন নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ফেডারেশনের নির্বাচনের ক্ষেত্রে। এই সামান্য সময়ের মধ্যে এমন কি হল যে আপনারাই সেই নেতৃত্বে থাকা একজনের বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ তুলছেন! আসলে ফেডারেশনে এখন ফুটবল সংক্রান্ত বিষয়ে খেলার থেকে রাজনীতি প্রাধান্য পাচ্ছে। সেটা একেবারেই কাঙ্খিত নয়। এর আগে এশিয়ান গেমসে দল পাঠানোর ক্ষেত্রে ফেডারেশন গড়িমসি করেছে। এশিয়ান কাপের ক্ষেত্রেও দল দিন দশেক ক্যাম্প করেই প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ল। দলের পারফরম্যান্সে তার প্রভাব পড়ছে দু’টো প্রতিযোগিতাতেই! আর সেই পারফরম্যান্সের জন্য প্লেয়ারদের দোষ দেওয়া অর্থহীন।” ফেডারেশনে আর্থিক নয়ছয়ের অভিযোগ ওঠা নিয়েও সরব হয়েছেন বাইচুং। পাহাড়ি বিছের কথায়, “এটা গুরুতর অভিযোগ। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।” ফেডারেশনের বৈঠক কেন সরাসরি সম্প্রচার করা হবে না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। “এখন তো সুপ্রিম কোর্টের মামলাও সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। তাহলে ফেডারেশনের বৈঠক সম্প্রচার করতে অসুবিধা কোথায়! আমরা তো দেশের ফুটবল নিয়েই আলোচনা করছি”, স্পষ্ট বক্তব্য ‘পাহাড়ি বিছে’র।