মোদী জমানায় শোচনীয় অবস্থা দেশের সংখ্যালঘুদের। বারবারই মিলেছে এর প্রমাণ। সামনে এসেছে তাদের দুর্দশার ছবি। যেমন ২০২১-এর ১৭ থেকে ১৯ ডিসেম্বর হরিদ্বারে আয়োজিত ‘হিন্দু ধর্মসংসদ’ নামক ধর্ম মহাসম্মেলন থেকে প্রকাশ্যেই ভারতের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সম্বন্ধে অভূতপূর্ব ঘৃণাভাষণ, সরাসরি সংখ্যালঘু-বিদ্বেষ ও তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার ডাক দেওয়া হয়েছিল্ল। উত্তরাখণ্ডের ‘হিন্দু রক্ষা সেনা’র সভাপতি প্রবোধানন্দ গিরি, হিন্দুদের হাতে অস্ত্র তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন, বলেন গোটা দেশ জুড়ে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ‘সাফাই অভিযান’ চালাতে হবে। আবার, সম্প্রতি বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ-হরিয়ানায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর-মসজিদ-মাজার গুঁড়িয়ে দিচ্ছে সরকারি বুলডোজার। আসামে একই কাজ করছেন বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা।
যতক্ষণ পর্যন্ত একটি শাসকদল, তার কর্মী ও সমর্থকবাহিনী এহেন ধ্বংসের যজ্ঞে অংশগ্রহণ করে ততক্ষণ অব্দি হিংসার কর্তৃত্ব থাকে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর কিছু মানুষের হাতে। কিন্তু যখন এই ঘৃণাকে সর্বজনীন করে তোলা হয় সোশ্যাল মিডিয়ায় অনবরত ভয়াবহ যান্ত্রিক প্রচার ও পাড়ায়-পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায় গণসংগঠনকে ব্যবহার করে, তখন আর এই ঘৃণার চরিত্র দলীয় পরিচিতিতে আটকে থাকে না। আজকের ভারতবর্ষে আমরা সেই ঘৃণার ‘সর্বজনীনতা’ তৈরির কৌশল দেখছি। একদিকে বিজেপির আইটি সেল ও তাদের হাজারো কর্মী, মূলধারার টিভি চ্যানেলের বিতর্কসভা, ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম-ট্যুইটার পোস্ট, হাজার হাজার রিলস তৈরি করে দ্রুত ভাইরাল বানিয়ে দেওয়া— এই সবক’টি উন্নত কারিগরি প্রযুক্তির মাধ্যমে সংখ্যালঘু বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে মিথ্যা প্রচার, মিথ্যা গালগল্পকে ইতিহাস বলে চালানোর মাধ্যমে।
প্রসঙ্গত, স্বাধীনতার সূচনালগ্ন থেকেই ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। এখানে প্রত্যেকটি ধর্মীয়, ভাষা, এথনিক গোষ্ঠীর স্বাধীনতা সংবিধানসম্মত। সেখানে কোনও সংখ্যালঘুকে সরকারি ক্ষমতার জোরে ভয় দেখানো যায় না, তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা, বিদ্বেষ ছড়ানো যায় না। আজ যখন উত্তরপ্রদেশের একটি মাধ্যমিক স্কুলে ক্লাসের মধ্যেই শিক্ষিকা একজন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্রকে দাঁড় করিয়ে হিন্দু ছাত্রদের নির্দেশ দেন তার গালে পরপর এসে থাপ্পড় মারতে এবং সেই ভিডিও ভাইরাল হয়, যখন চলন্ত দূরপাল্লার ট্রেনের ভিতর এক উচ্চবর্ণীয় জওয়ান সামান্য বচসার জেরে চারজন সংখ্যালঘু ব্যক্তিকে গুলি চালিয়ে মেরে ফেলে, তখন বোঝা যায়, ঘৃণা ও হিংসা আজ সমাজে এক সর্বজনীন রূপ পাচ্ছে। এই একই ঘটনা ঘটেছিল হিটলারের জার্মানিতে, যখন সাধারণ জার্মানদের চোখে ‘গণশত্রু’ বানানো হয়েছিল ইহুদিদেরও।