রাজ্যের সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ভর্তির অনিয়ম সংক্রান্ত মামলা নিয়ে বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চের সঙ্গে সংঘাত বেঁধেছে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের। বৃহস্পতিবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এ হেন বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন যে, বিচারপতি সেন ‘রাজনৈতিক স্বার্থ জড়িত থাকা’ ব্যক্তির মতো আচরণ করছেন। এ নিয়ে এবার কড়া প্রতিক্রিয়া জানাল তৃণমূল। শাসকদলের মুখপাত্র তথা রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের কথায়, ‘বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এখন আর বিচারপতি নন। তিনি আর এক বিচারপতি অমৃতা সিনহার উকিল হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছেন। যে মন্তব্য তিনি করেছেন, তা চক্ষুলজ্জাহীন রাজনীতির নামান্তর।’
কুণালের মতোই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের কড়া সমালোচনা করেছেন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী তথা শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘আজ যা হল, তা কলকাতা হাই কোর্টের ইতিহাসে কলঙ্কজনক। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মান এত নীচে নেমে গিয়েছে আর কী বলব! তাঁর কোনও মামলায় স্থগিতাদেশ হলেই তিনি সহ্য করতে পারছেন না। ব্যক্তিগত আক্রমণে চলে যাচ্ছেন। এটা দুর্ভাগ্যজনক।’ বৃহস্পতিবার ঘটনাকে অনেকেই বিচারপতি বনাম বিচারপতির সংঘাত হিসেবেই দেখছেন। ওই ঘটনা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি দেবাশিস কর গুপ্ত বলেন, ‘অনেক সময়ে মতের অমিল হয় বিচারপতিদের। তা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু এই ধরনের সংঘাতের পরিস্থিতি কখনও দেখিনি।’
ঘটনার সূত্রপাত রাজ্যের সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ভর্তির অনিয়ম সংক্রান্ত মামলা নিয়ে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ওই দুর্নীতিতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বুধবার। তা নিয়েই বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চের সঙ্গে তাঁর সংঘাত বাধে। বৃহস্পতিবার সকালে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় পাল্টা নির্দেশ দেন বিচারপতি সেনের বিরুদ্ধে। তাঁর অভিযোগ, বিচারপতি সেন ‘রাজনৈতিক স্বার্থ জড়িত থাকা’ ব্যক্তির মতো আচরণ করছেন। যা করছেন, তা ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য’ নিয়ে করছেন। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর নির্দেশে যা জানান তার মর্মার্থ, বিচারপতি সেন বিচারপতি অমৃতা সিনহাকে ডেকে ‘রাজনৈতিক স্বার্থে’ কাজ করছেন। বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে তোলপাড় পড়েছে।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের ওই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে কুণালের বক্তব্য, ‘বিচারপতি সিনহাকে বিচারপতি সেন কী বলেছেন, তা তো বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের জানার কথা নয়! এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে দুই বিচারপতি মিলে হাইকোর্টে দলবাজি করছেন! আসলে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ই রাজনীতি করছেন। এত দিন ধরে এই কথাটাই আমি এবং আমরা বলে আসছি।’’ কুণাল আরও বলেন, ‘‘নিম্ন আদালত থেকে সুপ্রিম কোর্ট— দেশের সব বিচারক, বিচারপতিই তো ন্যায়বিচারের কাজ করছেন। কিন্তু বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় দেখাতে চাইছেন উনি একাই কাজ করছেন। একাই সৎ। তা তো নয়। বাকিরা কি তা হলে আঙুল চুষছেন?’