অযোধ্যায় নবনির্মিত রামমন্দিরে ‘রামলালা’র প্রাণপ্রতিষ্ঠার দিনই বাংলার বুকে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ঐক্যের সুর বেঁধে দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শহরে আয়োজিত হল ‘সংহতি মিছিল’। আজ, সোমবার দুপুর ৩টেয় হাজরা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এই মিছিল শুরু হয়। প্রথমে কালীঘাটের মন্দিরে গিয়ে পুজো করেন মমতা। তার পরে একে একে গুরুদ্বার, মসজিদ এবং গির্জায় গিয়ে প্রার্থনা করেন। মিছিলে তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিরা। তাঁদের সঙ্গে নিয়েই মমতা পৌঁছন পার্ক সার্কাস ময়দানে সংহতি মিছিলের সভা মঞ্চে। পার্ক সার্কাস ময়দানে মমতার ‘সংহতি যাত্রা’র মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সমস্ত ধর্মের প্রতিনিধিরা। ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রয়েছেন রাজ্য তৃণমূল রাজ্যসভাপতি তথা তৃণমূল সাংসদ সুব্রত বক্সী। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনার দায়িত্বে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। ছিলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসও।
এদিন সংহতি যাত্রার মঞ্চে নাখোদা মসজিদের ইমাম মমতা ভূয়সী প্রশংসা করে বললেন, ‘‘দেশে যখন ভেদাভেদের পরিবেশ, তখন মমতা একা বাঘিনীর মতো সংহতির কথা বলছেন। ঘৃণার পরিবেশে ভালবাসার স্তবক নিয়ে ঘুরছেন। সমস্ত ধর্মকে ভালবাসার যে পথ আপনি দেখিয়েছেন, তা একদিন আপনাদের দেশের শীর্ষে পৌঁছে দেবে।’’ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “গরীবদের বঞ্চিত করে ধর্ম নিয়ে বিভাজন করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের নেত্রী বার বার বলেছেন ধর্ম যার যার উৎসব সবার। আমরা বাড়ির ভিতরে ধর্ম করব। বাইরে নয়। আজকের দিনটা আমার কাছে গর্বের। কারণ যেদিন দেশে একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে ঘিরে ভেদাভেদ চলছে, তখন বাংলায় ধর্মীয় সংহতি যাত্রা হচ্ছে।” এরপরই বক্তব্য রাখার সময় অযোধ্যায় রামমন্দির প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে মোদী সরকার তথা বিজেপিকে একহাত নেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, “ভোটের নামে দেশটাকে বিক্রি করছে কিছু লোক। ভোটের আগে ধর্মে উসকানি দেওয়া হচ্ছে। বাংলাকেই এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে। একটা লড়াই শুরু হয়েছে। আর এই লড়াই চলবে। আমরা না ভয় পেয়ে লড়ব। আমরা কাপুরুষ নয়। তাই আমরা লড়ব।’’
আগামীকাল নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মজয়ন্তী। সেই প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘বেচারা নেতাজি এত লড়াই করলেন স্বাধীনতার জন্য। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোসের জন্মদিনে ওদের জাতীয় ছুটির দিবস ঘোষণা করতে বলেছিলাম। বলে দিয়েছিল হবে না। আর আজ ওরা ছুটি চাইছে। ছুটি দিচ্ছে। কারণ আজ নাকি ওদের স্বাধীনতার দিন। জানি না, ওরা নতুন করে কী স্বাধীনতা পেয়েছে। ওদের কি রাজনৈতিক স্বাধীনতার দিন? যদিও স্বাধীনতা আন্দোলনে এদের কারও টিকিটিও ছিল না। আর আজ ওরা বলছে সবাইকে ছুটি দিয়েছি। বাড়িতে থাকো আর আমাদের কথা শোনো।’’ পাশাপাশি মমতার স্পষ্ট বার্তা, “আগুন জ্বালানো সহজ, নেভানো সহজ নয়।” তিনি জানান, ‘‘যখন বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়েছিল, আমি একা পথে নেমেছিলাম। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর কাছে গিয়েছিলাম। বলেছিলাম, কোনও প্রয়োজন আছে কি না। ভয় না পেয়ে সমস্ত জায়গায় গিয়ে ত্রাণ দিয়ে এসেছিলাম। এসব অনেকে ভুলে গিয়েছে। ’’
মোদী সরকার তথা বিজেপিকে কটাক্ষ করে মমতার বক্তব্য, “সকাল থেকে যা হচ্ছে মনে হচ্ছে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম হচ্ছে। কিন্তু এর পরের দিন থেকে কী হবে?’’ পাশাপাশি, রামমন্দিরে, প্রাণপ্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠানে বিপুল খরচ নিয়ে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। বলেন, ‘‘এরা খাবার পয়সা দেয় না। রাস্তার পয়সা দেয় না। বাংলা থেকে করের টাকা তুলে নিয়ে চলে যায়। আর আজ দেখুন সব জায়গায় এলইডি স্ক্রিন লাগিয়ে, সাজিয়ে গুছিয়ে কী করেছে। আমি বলব, গরিবদের বলি দিয়ে ধর্ম করবেন না।’’ এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। ‘‘আমি রামের বিরুদ্ধ নই। রাম-সীতাকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু তোমরা তো কই সীতার কথা বল না! তোমরা কি নারীবিরোধী? সীতা না থাকলে রাম হয় না। আর কৌশল্যা দেবী না থাকলে, মা না থাকলে রামের জন্ম হয় না। মায়েরাই জন্ম দেয়। ১৪ বছর বনবাসে সীতাই রামের সঙ্গে ছিলেন। আবার তাঁকে নিজেকে প্রমাণ করতে অগ্নিপরীক্ষাও দিতে হয়েছিল। আমরা জানি। আমরা তাই নারীশক্তি দুর্গার পুজো করি। রামই সেই দুর্গার পুজো করেছিলেন রাবণের সঙ্গে যুদ্ধে যাওয়ার আগে’’, রামমন্দির প্রসঙ্গে স্পষ্ট বক্তব্য বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর।