আজ ২৩শে জানুয়ারি। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৭তম জন্মজয়ন্তী। মহান স্বাধীনতা সংগ্রামীর স্মৃতিচারণ চলছে দেশজুড়ে। দেশের একজন নেতা কেমন হবেন, সুভাষচন্দ্রের জন্মদিনে তারই সংজ্ঞা বাতলে দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সামনেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগেই মমতা জানালেন, কোন কোন বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন দেশের নেতার মধ্যে। বুধবার নেতাজীর জন্মদিন উপলক্ষে রেড রোডে নেতাজি মূর্তিতে শ্রদ্ধার্ঘ জানাতে এসেছিলেন মমতা। পরে বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘‘নেতাজী দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে যা বলে গিয়েছিলেন, তা মানলে ভারতবর্ষ আরও বড় দেশ, উন্নত দেশ হিসাবে বিশ্ববিশ্রুত হতে পারত। কিন্তু তা হয়নি। আমাদের আফসোস, আজও নেতাজীর মতো এক জন নেতা জন্মাল না দেশে।’’ মমতার মতে দেশের নেতা তিনিই হবেন, যিনি সব ধর্মের মানুষকে পাশে নিয়ে চলবেন। তাঁর কথায়, ‘‘দেশের নেতা তিনিই, যাঁর এক পাশে থাকে হিন্দু, এক পাশে মুসলমান, এক পাশে থাকে খ্রিস্টান, অন্য পাশে শিখ, জৈন, বৌদ্ধ।’’ ঘটনাচক্রে, ওই সোমবারই মমতা সকল ধর্মের প্রতিনিধিদের নিয়ে সংহতি মিছিল করেছেন করেন কলকাতায়। হাজরা থেকে পার্ক সার্কাস, সেই দলীয় কর্মী, সমর্থক, নেতা নেত্রীদের নিয়ে সংহতি মিছিলের পুরভাগে মুখ্যমন্ত্রীর পাশেই দেখা গিয়েছে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, সকল ধর্মের প্রতিনিধিদের। অন্য দিকে, সোমবার অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে ‘রামলালা’র মূর্তিতে প্রাণপ্রতিষ্ঠার পুজো করেন তিনি।
এই প্রসঙ্গেই বিজেপিকে কটাক্ষ করে মমতার মন্তব্য, ‘‘ওরা বিভাজনের পরিকল্পনা করে। হিংসার রাজনীতির পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা করে ধর্ম নিয়ে ভেদাভেদের আর পরিকল্পনা করে ভেদাভেদের মাধ্যমে শাসনের!’’ আসলে মমতা বুঝিয়েছেন, দেশের শাসকদল এবং তাঁদের নেতারা সব ধর্মকে সঙ্গে নিয়ে চলেন না। যা মমতার মতে একজন আদর্শ দেশনেতার গুণ হওয়া উচিত। সম্প্রতিই ধর্মাচরণ নিয়ে মোদীকে আক্রমণ করেছিলেন মমতা। রামমন্দিরে মোদীর পুজো প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ‘‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা আমাদের (নেতা বা রাজনীতিকদের) কাজ নয়। তার জন্য আলাদা লোক আছে।’’ মমতা এ-ও বলেছিলেন, ‘‘নিজের ধর্ম আমি বাড়িতে পালন করি। বাড়িতেই রেখে আসি।’’ তবে দেশের নেতার সংজ্ঞা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মমতা যেমন ধর্মকে টেনেছেন, তেমনই নেতাজীকে নিয়ে দেওয়া মোদীর প্রতিশ্রুতিরও সমালোচনা করেছেন মমতা। বলেছেন, ‘‘ক্ষমতায় আসার আগে ওরা বলেছিল, নেতাজীর মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করবে। ক্ষমতায় তারা এসে গিয়েছে বহু দিন। কিন্তু কারণ আজও জানা যায়নি। উল্টে নেতাজির তৈরি প্ল্যানিং কমিশনটাকেই ওরা তুলে দিয়েছে। প্ল্যানিং (পরিকল্পনা) এখন কিলিং (হত্যা)-এর দিকে চলে গিয়েছে।’’ উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার আগে মোদীই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি নেতাজীর দেহাবশেষ দেশে ফিরিয়ে আনবেন। নেতাজির মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। সেই প্রতিশ্রুতি যে পূরণ হয়নি, তাও মনে করিয়ে দিয়েছেন মমতা। ‘‘দেশের কী দুর্ভাগ্য! যে মানুষটা দেশের জন্য লড়াই করল, দেশকে দিশা দেখাল, তার জন্মদিন জানলেও মৃত্যুর দিন জানতে পারব না। সেই ইতিহাস চির অমাবস্যার অন্ধকারে লজ্জায় লুকিয়ে আছে। নেতাজী আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখিয়েছিলেন। সবাইকে নিয়ে চলতে শিখিয়েছিলেন তাই তাঁকে দেশনায়ক বলেছিলেন গান্ধীজি। কিন্তু আজ আর তেমন নেতা কোথায়? আর তো নেতাজীর মতো নেতা জন্মালো না। আজ আর তোমার দেখা নাই’’, বক্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর।