রুদ্ধশ্বাস হয়ে সিরিজের শেষ ম্যাচ। খেলা গড়াল সুপার ওভার। তাও দু-দুবার! অবশেষে ম্যাচ পকেটে পুরে নিল ভারত। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে আফগানদের হোয়াইটওয়াশ করলেন রোহিত শর্মারা। একই সঙ্গে তৈরি হল নতুন বিশ্বরেকর্ড। দ্বিপাক্ষিক সিরিজে বিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করে জেতার নিরিখে ভারত ও পাকিস্তান এক জায়গায় ছিল। দু’দলই ৮ বার করে বিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করে সিরিজ জিতেছিল এর আগে পর্যন্ত। আফগানিস্তানকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে ভারত নবম বার দ্বিপাক্ষিক সিরিজে বিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করল। বুধবার টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। কিন্তু বেঙ্গালুরুর ২২ গজে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে পড়ে ভারতীয় দল। ২২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যান রোহিতেরা। কিন্তু অধিনায়কের অনবদ্য ১২১ রানের অপরাজিত ইনিংস এবং রিঙ্কু সিংহের ৬৯ রানের অপরাজিত ইনিংস ভারতকে লড়াই করার মতো জায়গায় পৌঁছে দেয়। ভারতের হয়ে রোহিত এবং রিঙ্কু ছাড়া কেউ রান পাননি। ওপেনার যশস্বী ৪ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন। বিরাট কোহলি এবং সঞ্জু স্যামসন প্রথম বলেই আউট হয়ে যান। শিবম দুবে করেন ১ রান। ২৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ভারত ধুঁকছিল। আফগানিস্তানের বোলারেরা ভাবছিলেন, এই ম্যাচে ভারতকে কম রানে আটকে রাখা যাবে। কিন্তু সব হিসাব পাল্টে দিল রোহিত-রিঙ্কুর যুগলবন্দী। ১৯০ রানের জুটি গড়েন তাঁরা। খেলেন মাত্র ১০০ বল। রোহিত অপরাজিত থাকেন ১২১ রানে। টি-টোয়েন্টিতে এটাই রোহিতের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। রিঙ্কু অপরাজিত রইলেন ৬৯ রানে। রিঙ্কুরও এটা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। দু’জনে মিলে মোট ১৪টি ছক্কা মারেন। এর মধ্যে ইনিংসের শেষ তিনটি বলে ছক্কা মারেন রিঙ্কু।
এদিন আফগান বোলারদের মধ্যে সফলতম ফারিদ আহমেদ ২০ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন। ২১৩ রানের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালই করেছিল আফগানিস্তান। দুই ওপেনার গুরবাজ (৫০) এবং জাদরান (৫০) প্রথম উইকেটের জুটিতে ১১ ওভারে ৯৩ রান তোলেন। কলকাতা নাইট রাইডার্সের উইকেটরক্ষক-ব্যাটার মারলেন ৩টি চার এবং ৪টি ছয়। আফগান অধিনায়কের ব্যাট থেকে এল ৪টি চার এবং ১টি ছক্কা। তিন নন্বরে নেমে ভাল খেললেন নাইবও। তিনি শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ২৩ বলে ৫৫ রান করে। তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৪টি করে চার এবং ছক্কা। অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার নবির ব্যাট থেকে এল ১৬ বলে ৩৪ রানের আগ্রাসী ইনিংস। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সফলতম ওয়াশিংটন সুন্দর। তিনি ১৮ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিলেন। ১টি করে উইকেট পেয়েছেন আবেশ খান এবং কুলদীপ যাদব। শেষমেশ ম্যাচ টাই হয়। সুপার ওভারে প্রথমে ব্যাট করে আফগানেরা। রোহিত বল তুলে দেন মুকেশ কুমারকে। সফরকারীদের হয়ে ব্যাট করতে নামেন গুলবাদিন নাইব এবং রহমানুল্লাহ গুরবাজ। প্রথম বলেই রান আউট হন নাইব। নামতে হয় মহম্মদ নবিকে। মুকেশের ৬ বলে আফগানেরা করেন ১ উইকেটে ১৬ রান। নবি ৭ এবং গুরবাজ় ৫ রানে অপরাজিত থাকেন। জবাবে ভারতের হয়ে ব্যাট করতে নামেন যশস্বী জয়সওয়াল এবং রোহিত। ৫ বলের পর পায়ে টান ধরায় উঠে যান রোহিত। মাঠে নামেন রিঙ্কু সিংহ। আজমতুল্লা ওমরজাইয়ের ৬ বলে ভারতও তোলে ১৬ রান। ফলে দ্বিতীয় সুপার ওভারে গড়ায় ম্যাচ। এবার প্রথমে ব্যাট করে ভারত। নামেন রোহিত এবং রিঙ্কু। রোহিত ৩ বলে ১১ তোলার পর রিঙ্কু প্রথম বলেই আউট হয়ে যান। পরের বলে রান আউট হন রোহিত (১১)। ফলে আফগানিস্তানের সামনে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১২ রান। ব্যাট করতে নামেন নবি এবং গুরবাজ। রোহিত এবার বল তুলে দেন লেগস্পিনার রবি বিষ্ণোইকে। তিনি প্রথম বলেই আউট করেন নবিকে। তৃতীয় বলে গুরবাজকে আউট করে ভারতকে জয় এনে দেন বিষ্ণোই। ম্যাচের সেরা নির্বাচিত হন রোহিত শর্মা। সিরিজ সেরার শিরোপা উঠেছে শিবম দুবের মাথায়।