দেশের সর্বত্রই নিজের ভাবধারা প্রচার করতে চেয়েছিলেন আদি শঙ্কর। তাই তিনি দেশের চার কোণে মঠ প্রতিষ্ঠার জন্য চারটি নির্দিষ্ট স্থান নির্বাচন করেছিলেন। পুরী, জোশীমঠ, দ্বারকা এবং শৃঙ্গেরীতে এখনও রয়েছে সেই চার মঠ। যাদের প্রধান পরিচালকের নাম শঙ্করাচার্য। হিন্দুধর্মে সন্ন্যাসের গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা করে তাঁদের বাণী। হিন্দু ধর্ম সংরক্ষণ এবং ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে তাঁদের তাৎপর্য রয়েছে। চার বেদের অগাধ জ্ঞান শঙ্করাচার্যদের। বেদ, উপনিষদের ব্যাখ্যায় তাঁদের জুড়ি মেলা ভার। হিন্দু দর্শনের অন্যতম শাখা অদ্বিতীয় বেদান্তের বিকাশ, ব্যাপ্তিতে তাঁদের অবদান রয়েছে। সম্প্রতি অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনের সূত্র ধরে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছেন ৪ শঙ্করাচার্য। তাঁদের বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, শঙ্করাচার্য এবং তাঁদের মঠের ইতিহাস অনেক পুরনো। ভারতের চার প্রান্তে চারটি মঠ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আদি শঙ্কর। সেই থেকে তাঁর ভাবধারা বহন করে চলেছে এই মঠগুলি। আদি শঙ্কর প্রতিষ্ঠিত পুরীর মঠটির নাম গোবর্ধনপীঠ। খ্রীষ্টপূর্ব ৪৮৬ অব্দে এই মঠ তৈরি করা হয়েছিল। বর্তমানে এই মঠের প্রধান হলেন শঙ্করাচার্য স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী। দেশের দক্ষিণ প্রান্তে আদি শঙ্কর প্রতিষ্ঠিত মঠটির নাম শ্রীসারদাপীঠ। দক্ষিণে মঠ প্রতিষ্ঠার জন্য কর্ণাটকের শৃঙ্গেরীকে উপযুক্ত হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন শঙ্কর। বর্তমানে শঙ্করের দক্ষিণ মঠ বা শৃঙ্গেরী মঠের প্রধানের নাম শঙ্করাচার্য স্বামী ভারতী তীর্থ মহেশ্বরী। শৃঙ্গেরী মঠের ৩৬ তম শঙ্করাচার্য তিনি। বয়স ৭২ বছর। ১৯৭৪ সাল থেকে মঠের প্রধান হিসাবে দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।
আদি শঙ্কর প্রতিষ্ঠিত পশ্চিম মঠের নাম দ্বারকা সারদাপীঠ। গুজরাতের দ্বারকা জেলায় ওই মঠটি স্থাপন করা হয়েছিল। ওই মঠের বর্তমান প্রধানের নাম শঙ্করাচার্য সদানন্দ সরস্বতী। দ্বারকায় শঙ্করাচার্যের মঠটি চার তলা বিশিষ্ট। চারটি তলা দেশের চার প্রান্তের চার পীঠের প্রতিনিধিত্ব করে। মঠের দেওয়ালে রয়েছে শঙ্করাচার্যের বিভিন্ন ছবি। স্তম্ভগুলিতে খোদাই করা রয়েছে শিবের নানা রূপ। দেশের উত্তর প্রান্তে আদি শঙ্কর যে মঠটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তার নাম জ্যোতির্পীঠ। উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলার জোশীমঠে ওই মঠ রয়েছে। বর্তমান প্রধান হলেন শঙ্করাচার্য স্বামী অভিমুক্তেশ্বরানন্দ সরস্বতী।
অযোধ্যায় আগামী ২২ জানুয়ারি রামমন্দির উদ্বোধন করতে চলেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর হাতেই রামমন্দিরে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হবে। এই রামমন্দির উদ্বোধনের আবহে শঙ্করাচার্যেরা শিরোনামে উঠে এসেছেন। পুরী গোবর্ধনপীঠের শঙ্করাচার্য জানিয়েছেন, তিনি অযোধ্যার অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন না। পরে জোশীমঠের জ্যোতির্মঠপীঠের শঙ্করাচার্যও জানান, দেশের চার পীঠের চার শঙ্করাচার্যই অনুষ্ঠানে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শঙ্করাচার্যদের দাবি, অযোধ্যায় সনাতন ধর্ম লঙ্ঘিত হতে চলেছে। তাই এই অনুষ্ঠান তাঁরা বয়কট করছেন। গঙ্গাসাগরের অনুষ্ঠানে গিয়ে পুরীর শঙ্করাচার্য প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনাও করেছেন।