এই মুহূর্তে গোটা দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে অযোধ্যার রাম মন্দির। আগামী ২২ জানুয়ারি যার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ওই অনুষ্ঠানে বাকি আমন্ত্রিতদের মধ্যে অন্যতম বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি লালকৃষ্ণ আডবানিও, যিনি রাম মন্দির নির্মাণের দাবিতে অযোধ্যা অভিমুখে রথ ছুটিয়েছিলেন। ১৯৯২-এর ৬ ডিসেম্বরও অযোধ্যায় হাজির ছিলেন তিনি, যেদিন উন্মত্ত করসেবকেরা বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলে। আডবানি জানিয়েছেন, বয়স এবং শারীরিক নানা সমস্যা সত্ত্বেও তিনি ২ জানুয়ারি অযোধ্যা যেতে চান।
তবে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী জীবিত থাকলে আজ কী করতেন? তিনি কি অযোধ্যায় মন্দির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যেতেন? কারও পক্ষেই এই ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়। বাজপেয়ীর ঘনিষ্ঠজন এবং আত্মীয়স্বজনেরাও এই ব্যাপারে অনুমানের ভিত্তিতে কিছু বলতে চান না। তবে মন্দির-মসজিদ আন্দোলনের ধারাবাহিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করেন, আমন্ত্রণ পেলেও অটল বিহারী বাজপেয়ী যেতেন কি না সে ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করার যথেষ্ট কারণ আছে। ১৯৯০-এর অক্টোবরে গুজরাতের সোমনাথ মন্দির থেকে যাত্রা অযোধ্যা অভিমুখে রথ ছুটিয়েছিলেন আডবানি। অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের দাবিতে হওয়া সেই রথযাত্রায় শামিল হননি বিজেপির আর এক প্রতিষ্ঠাতা নেতা এবং দলের মুখ বাজপেয়ী।
যদিও এর আগের বছর হিমাচল প্রদেশের পালানপুরে বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে দল প্রস্তাব গ্রহণ করে অ়যোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণে বিশ্বহিন্দু পরিষদের দাবি দল সমর্থন করবে। সেই বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের অন্যতম ছিলেন বাজপেয়ী। পরের বছর আডবানির রামরথ নিয়ে বাজপেয়ীর নীরবতা অনেককেই বিস্মিত করে। প্রয়াত সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার তাঁর আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছেন, বিশ্বহিন্দু পরিষদের দাবি পূরণে বিজেপির শামিল হওয়াতে বাজপেয়ীর সায় ছিল না।’ শুধু তাই নয়, আডবানির ওই আন্দোলনের সপক্ষে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি পরবর্তীকালে বিজেপির প্রথম প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ী।
আবার বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিন বাজপেয়ী ছিলেন দিল্লিতে থাকলেও আগের দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিলেন লখনউতে। সেখানে করসেবকদের জমায়েতে ভাষণও দেন। ভাষণে বলেন, ‘আমার ইচ্ছা ছিল কাল (৬ ডিসেম্বর, ১৯৯২) অযোধ্যায় যাই। কিন্তু পার্টি আমাকে দিল্লিতে থাকতে বলেছে। দলের নির্দেশ তো মানতেই হবে।’ করসেবকদের জমায়েতে সেদিন বাজপেয়ীর কথায় উগ্রতা ছিল না।
কিন্তু উগ্র কার্যকলাপ থেকে সংযত থাকতেও কিছু বলেননি তিনি। বরং বলেছিলেন, ‘করসেবা হবে। আটকানোর কোনও প্রশ্নই ওঠে না। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, করসেবা করা যাবে। তবে কোনও কিছু নির্মাণ করা যাবে না। কিন্তু পুজোর বেদি তো মির্মাণ করতেই হবে। সর্বোচ্চ ন্যায়ালয় বলেছে, অযোধ্যায় করসেবকেরা ভজন-কীর্তন করতে পারবে। ভজন কীর্তন তো একা একা করা যায় না। অনেক মানুষ লাগে। আর কতক্ষণই বা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভজন, কীর্তন করা সম্ভব! বসতে হবে। তারজন্য পাথরের টুকরোগুলি সরাতে হবে। আমি জানি না কাল অযোধ্যায় কী পরিস্থিতি হবে।’
অনেকেই মনে করেন, আডবানির রামরথে সওয়ার না হলেও বাজপেয়ীর ভাষণ সেদিন করসেবকদের যথেষ্ঠ উৎসাহ জুগিয়েছিল। বাজপেয়ীর ভাষণ শেষে করসেবকেরা তুমুল উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে অযোধ্যা অভিমুখে রওনা হয়ে যান। যদিও পরে এক সাক্ষাৎকারে বাজপেয়ী বলেছিলেন, তিনি রাম মন্দিরের পক্ষে অবশ্যই ছিলেন। কিন্তু অশান্তি চাননি। বাবরি ধ্বংসের জন্য প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশও করেন। করসেবায় অংশ নেওয়া আদবানীও বলেছিলেন, মসজিদ ভাঙায় তাঁর সায় ছিল না। এই ধরনের কিছু হতে পারে, তা আগাম আঁচ করেননি। তিনিও ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন।