রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর থেকেই বাংলার পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে বিশেষভাবে উদ্যোগী হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার উত্তরবঙ্গের পর্যটনের উন্নয়নে নয়া পদক্ষেপ নিল রাজ্য। সরকারি খরচে তৈরি হল ইকো টুরিজম হাব। মহিলাদের কর্মসংস্থানই যার মূল লক্ষ্য। দেবী চৌধুরানীর স্মৃতি বিজড়িত স্থান জলপাইগুড়ি বৈকুন্ঠপুর বনাঞ্চল। সেই ইতিহাসকে সামনে রেখে এলাকায় কর্মসংস্থান বাড়াতে জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের বারোপাটিয়া নতুন বস গ্রামপঞ্চায়েতের গৌড়িকোন এলাকায় তৈরি হয়েছে এই ইকো টুরিজম হাব। নাম দেওয়া হয়েছে আনন্দমঠ ইকো টুরিজম হাব। সোমবার এই হাবের উদ্বোধন করেন জেলা পরিষদের অতিরিক্ত জেলা শাসক তেজস্বী রানা। জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের বারোপাটিয়া নতুন বস গ্রামপঞ্চায়েতের উদ্যোগে এবং জলপাইগুড়ি জেলাপরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি, পিএনআরডি-সহ একাধিক দফতরের আর্থিক সাহায্যে এই ইকো টুরিজম হাব তৈরি হয়েছে। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। আপাতত এই হাবে থাকছে তিনটি কটেজ। আগামিদিনে এখানে আরও ৩০টির বেশি কটেজ হবে। একেকটি কটেজে চারজন পর্যন্ত থাকতে পারবেন। একদিনের থাকা খাওয়ার জন্য জনপ্রতি খরচ পড়বে ১২০০ টাকা করে। সবটাই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা পরিচালনা করবেন। এখানে বিশাল অর্গানিক ফার্ম তৈরি করা হচ্ছে। সেখানকার অতিথিদের জন্য রান্না করা হবে শাক-সবজি।
পাশাপাশি, বিশাল আকারে পুকুর কাটা হচ্ছে এখানে। থাকবে বোটিংয়ের ব্যবস্থা। মাছ চাষও হবে। স্থানীয় মহিলারা এখানেই ঢেঁকি ছাটা চাল তৈরি করে প্যাকেজিং করবেন। এখানেই মুড়ি ভাজা হবে। কেউ চাইলে একবেলাও এসে ঘুরে যেতে পারেন। তাঁদের খাওয়াদাওয়ার চিন্তা নেই। থাকবে রেস্তোরাঁ। জেলা প্রশাসন মনে করছে, এই ইকো টুরিজম হাবকে ঘিরে এলাকার অর্থনীতি নতুন দিন দেখবে। বৈকুন্ঠপুরের জঙ্গলের নাম শুনলেই কেউ যেন কানের কাছে ফিসফিস করে ভবানী পাঠক ও দেবী চৌধুরানির ইতিহাস শুনিয়ে যায়। এখান থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে দেবী চৌধুরানি ও ভবানী পাঠকের গোপন ডেরা। এখন তা শিকারপুর দেবীচৌধুরানী মন্দির নামে পরিচিত। ইতিহাস আছে আরও। ফলে পর্যটনকে এই এলাকা একটা আলাদা স্তরে নিয়ে যেতেই পারে। এরপর তিস্তাপার তো আছেই। গৌরিকোনে পরিযায়ী পাখিরা ভিড় জমায়। আবার ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে রয়েছে সতীপিঠের একপিঠ ভ্রামরী দেবীর মন্দির। রয়েছে শতাব্দী প্রাচীন গৌরিকোন মন্দিরও। এতকিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে যে এলাকায়, তাকে পর্যটনের কেন্দ্র করে তুলতে স্থানীয় গ্রামপঞ্চায়েত প্রথম উদ্যোগ নেয়। অতিরিক্ত জেলাশাসক তেজস্বী রানা বলেন, গ্রামপঞ্চায়েতের উদ্যোগে এ এক বিরাট আয়োজন। বহু মানুষের কাজ হবে। এলাকার অর্থনীতিতে বদল আসবে। শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি বা এসজেডিএ-র সদস্য তথা প্রাক্তন উপপ্রধান কৃষ্ণ দাস জানান, এলাকার সৌন্দর্য এখানকার ইউএসপি। সঙ্গে ইতিহাসের সাক্ষ্যও আছে এলাকায় কোণে কোণে। এমন জায়গায় এই উদ্যোগ সফল হবেই। পর্যটকরাও অনেক কিছু জানতে পারবেন। আগামী এক বছরের মধ্যে রিসর্ট, রেস্তোরাঁ তৈরি করারও পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক।