২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মায়ানমারের গণতন্ত্রকামী নেত্রী আউং সান সু চির দল ‘ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি’র নেতৃত্বাধীন সরকারকে উৎখাত করে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছিল মায়ানমার সেনা। মাত্র তিন বছরের মধ্যে বড়সড় সঙ্কটের মুখোমুখি হল তারা। এবার ভারত সীমান্তের অদূরে মায়ানমারের গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দর পালেতাওয়ার দখল করল বিদ্রোহী জোট। রাখাইন প্রদেশের অন্তর্গত কালাদান নদীর তীরবর্তী ওই শহর ভারত এবং বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। বিদ্রোহী বাহিনীর পালেতাওয়ার দখলের ফলে মানানমারের সামরিক জুন্টা সরকার আর্থিক ও বাণিজ্যিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি, এর ফলে নতুন করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শরণার্থীদের অনুপ্রবেশের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, মায়ানমারের তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠী— ‘তাঙ ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি’ (টিএনএলএ), ‘আরাকান আর্মি’ (এএ) এবং ‘মায়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি’ (এমএনডিএএ)-র জোট ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়্যান্স’ নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে সে দেশের সামরিক জুন্টা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছিল। ওই অভিযানের পোশাকি নাম ‘অপারেশন ১০২৭’। বিদ্রোহীদের হামলার জেরে ইতিমধ্যেই সে দেশের অর্ধেক এলাকা সরকারি সেনার হাতছাড়া হয়েছে। উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিম মায়ানমারের শান, চিন আর সাগিয়াং প্রদেশ রয়েছে এই তালিকায়। এ বার লড়াই শুরু হল পশ্চিম মায়ানমারের রাখাইনে। যা ‘রোহিঙ্গাভূমি’ নামেও পরিচিত।
‘ব্রাদারহুড অ্যালায়্যান্স’-এর অন্তর্গত তিন সংগঠনের পাশাপাশি বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘চিন ন্যাশনাল আর্মি’ (সিএনএ) এবং চায়নাল্যান্ড ডিফেন্স ফোর্স (সিডিএফ), ‘কাচিন লিবারেশন ডিফেন্স ফোর্স’ (কেএলডিএফ), পিপল’স ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ)-ও শামিল হয়েছে জুন্টা বিরোধী যুদ্ধে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বিদ্রোহী জোটের তরফে জুন্টা সেনার উপর হামলা চালাতে ‘ব্রিগেড ৬১১’ নামে একটি বাহিনী গঠন করেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের জনজাতিদের নিয়ে গঠিত হয়েছে ওই বাহিনী। তারাই এই মুহূর্তে রয়েছে লড়াইয়ের প্রথম সারিতে। এদিকে, মায়ানমারের জুন্টা সরকার অবশ্য রাখাইনে পরাজয় নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। এর আগে চিন সীমান্তবর্তী আর এক গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য শহর লুক্কেই হাতছাড়া হওয়া নিয়েও নীরব ছিল তারা।