ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নানান সময় বিভিন্ন অদূরদর্শী পদক্ষেপ নিয়েছে মোদী সরকার। ফলত একাধিকবার বিড়ম্বনার কবলে পড়েছে আমজনতা। চব্বিশের নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে আগে মোদীর অন্যতম অস্ত্র এখনও জিএসটি। তবে বাস্তব জীবনে সাধারণ মানুষকে সত্যিই কি কোনও সুরাহা দিয়েছে জিএসটি? এই প্রশ্ন তুলছে খোদ কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানই। কেন্দ্রের অর্থমন্ত্রকের অন্তর্ভুক্ত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসির সম্প্রতি একটি রিপোর্ট জানা গিয়েছে, ভারতে শূন্য থেকে ৫ শতাংশ জিএসটির সুবিধা পান তুলনামূলক উচ্চবিত্তরা। সেখানে ১২ বা ১৮ শতাংশের বোঝা মধ্যবিত্তের উপর। কারণ, নিত্যপ্রয়োজনীয় বহু সামগ্রী এই ১২ থেকে ১৮ শতাংশের স্ল্যাবের আওতাভুক্ত। ফলে মূল্যবৃদ্ধির বাজারে নাভিশ্বাস উঠছে জনসাধারণের। সেই স্বশাসিত গবেষণাকেন্দ্রের রিপোর্ট বলছে, ভারতের বাজারে জিএসটির হারগুলি হল ০.১ (যেমন রপ্তানিকারী সংস্থাকে পাঠানো পণ্য), ০.২৫ (যেমন হীরে), ৩ (যেমন সোনা, রুপো), ৫, ১২, ১৮ এবং ২৮। ২৮ শতাংশ জিএসটির পাশাপাশি সেস বসানো হয়েছে সিগারেটের উপর। এছাড়াও বহু পণ্য রাখা হয়েছে জিএসটি মুক্ত। যেমন, পেট্রল, ডিজেল ইত্যাদি।
পাশাপাশি, রিপোর্টে আরও জানা গিয়েছে, মোট ১২৩টি পণ্যের উপর চাপানো জিএসটির হার সব আলাদা আলাদা। গ্রামে আয়ভিত্তিক কাঠামোর নীচে যাঁরা আছেন, তাঁদের পণ্যের পিছনে মাসে গড়ে খরচ হয় ৯৩৪ টাকা। এই তালিকার সব চেয়ে উপরের স্তরের নাগরিকদের মাসিক গড় খরচ ৫ হাজার ৯৪৫ টাকা। অন্যদিকে একইভাবে শহরাঞ্চলে নিম্ন স্তরে খরচ ১ হাজার ১২৪ টাকা এবং সব চেয়ে উপরে স্তরে খরচ হয় ৮ হাজার ৮৮২ টাকা। এছাড়াও রিপোর্টে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, গ্রাম শহর নির্বিশেষে শূন্য থেকে ৫ শতাংশ জিএসটি পণ্যের সুবিধা ভোগ করেন মূলত আয়ভিত্তিক কাঠামোর শীর্ষস্থানে থাকা জনতাই। রিপোর্টে জানা যাচ্ছে যে, ১২ থেকে ১৮ শতাংশের স্ল্যাবের আওতায় থাকা পণ্যগুলিই মধ্যবিত্তদের বোঝা বাড়াচ্ছে। অর্থাৎ, জিএসটির হারে কোনও সামঞ্জস্যই থাকছে না। সেই রিপোর্টে উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে, ১,০০০ টাকা মূল্যের নীচের জামাকাপড়ের উপর ৫ শতাংশ জিএসটি বসানো আছে। তার উপরে দাম হলে জিএসটি ১২ শতাংশ। কীভাবে একই ধরনের পণ্যে দু’রকমের কর হয়? এইভাবে বাড়ছে মধ্যবিত্তের উপর করের বোঝা। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে জিএসটি কাঠামোয় গভীর অসামঞ্জস্য ধরা পড়েছে। যদি সার্বিকভাবে জিএসটি ৮ শতাংশ হত, তাহলে সামঞ্জস্য বজায় থাকত। এইভাবে ১ হাজার টাকার নীচের জুতোর ক্ষেত্রে কর ১২ শতাংশ, তার বেশি হলে ১৮ শতাংশ। এক্ষেত্রে যদি সার্বিকভাবে জিএসটি ১৫ শতাংশ হত, তাহলে সামঞ্জস্য বজায় থাকত। কেন্দ্রের অপরিকল্পিত, অসামঞ্জস্যপূর্ণ জিএসটি কাঠামোর মাশুল গুনতে হচ্ছে শুধুমাত্র মত্তবিত্ত, ছোট ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশকে। উচ্চবিত্ত ও বৃহৎ শিল্পের ক্ষেত্রে দেওয়া হচ্ছে বিরাট সুবিধা। অর্থাৎ ভোটের স্বার্থে জিএসটি নিয়ে মোদী সরকারের গালভরা প্রচার যে বাস্তবে পুরোপুরি অন্তঃসারশূন্য, কেন্দ্রীয় সংস্থার রিপোর্টেই তা ফুটে উঠছে বারবার।