একুশের বিধানসভা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তুরুপের তাস ছিল লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ঘোষণা। তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসেই এই প্রকল্প কার্যকর করেন তিনি। এখন বাংলার ২ কোটিরও বেশি মহিলারা মাসে মাসে এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১০০০ বা ৫০০ টাকা করে পান। যাকে বিরোধীরা ‘ভিক্ষার টাকা’ বলে কটাক্ষ হানতে ছাড়েন না। যদিও এই প্রকল্প চালু হওয়ার পর বাংলার আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির যে একটা বদল এসেছে, তা সরকারের পক্ষ থেকে বহুদিন ধরেই যেমন দাবি করা হচ্ছে তেমনি নানা বেসরকারি সংস্থাও তথ্য দিয়ে একই কথা জানিয়েছে। এবার সেই দাবিকে আরও মান্যতা দিল নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের প্রতীচি ইন্ডিয়া ট্রাস্ট।
লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জন্য কতটা উপকার হয়েছে বাংলার সাধারণ মানুষের? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে মমতা সরকার পিআইটিকে দিয়ে দুয়ারে সরকার কর্মসূচীর সমীক্ষা করিয়েছিল। সেই সমীক্ষার রিপোর্ট স্পষ্ট জানিয়েছে, বাংলার নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, অনগ্রসর সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে সংসার চালানো এবং ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার অন্যতম ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। খুব কম ক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত কাজের পিছনে এই অর্থ খরচ করছেন গ্রামগঞ্জ-শহরতলি কিংবা শহরের মহিলারা। ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে গত ৭টি দুয়ারে সরকার শিবিরের মাধ্যমে ৮.১০ কোটি পরিষেবা প্রদান নিশ্চিত করেছে রাজ্য সরকার।
বর্তমানে রাজ্যজুড়ে চলছে অষ্টম দুয়ারে সরকার শিবির। এই আবর্তেই প্রকাশিত হয়েছে অমর্ত্য সেনের প্রতীচিকে দিয়ে করানো সমীক্ষার রিপোর্ট। তাতেই দেখা যাচ্ছে, দুয়ারে সরকারের মূল অভিমুখই হয়ে দাঁড়িয়েছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। রাজ্যের ১১টি জেলায় দুয়ারে সরকার শিবিরে আসা মানুষের মধ্যে ৮৯.৫ শতাংশই এসেছিলেন এই প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার লক্ষ্যে। আর সেই টাকার বেশিটাই খরচ হয়েছে প্রয়োজনে। রাজ্যের অর্থনীতিবিদদের একাংশের দাবি, মহিলাদের হাতে আর্থিক সহায়তা পৌঁছলে তা ভালো কাজে খরচ হয়। আসলে পুরুষদের থেকে মহিলারা সংসার নিয়ে অনেক বেশি দায়িত্বশীল। ফলে সামান্য অভাব থাকলেও তাঁরা সেটা যে কোনও প্রকারে মিটিয়ে সকলের মুখে হাসি দেখতে চান।
লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছে, অনেক উপভোক্তার ছেলেমেয়েই তাঁর বংশের প্রথম সন্তান যারা স্কুলে যাচ্ছে ও পড়াশোনা করছে। ফলে এই পরিবার বা মহিলারা মনে করছেন যে, ৫০০ বা ১০০০ টাকা দিয়ে একটা প্রাইভেট টিউশন নিলে তাঁদের ছেলেমেয়েদের কাজে লাগবে। তাঁরা আর একটু ভাল ভাবে পড়াশোনা করার সুযোগ পাবে। শুধু তাই নয়, সমীক্ষার রিপোর্ট কার্যত স্পষ্ট করেছে যে, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার এবং দুয়ারে সরকার শিবির বাড়ির মহিলাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস অনেকাংশে বাড়িয়েছে। মানুষ নিজেদের নাগরিক অধিকার সম্পর্কেও সচেতন হয়েছেন।