বুধবার শীতকালীন অধিবেশনের জিরো আওয়ার চলাকালীন হঠাৎই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে নতুন সংসদ ভবন। গ্যালারি থেকে আচমকা লোকসভায় লাফ দিয়ে পড়েন দুই অজ্ঞাতপরিচয় তরুণ। তাঁদের হাতে ধরা টিনের কৌটা থেকে বের হয় হলুদ রঙের ধোঁয়া। সেই ধোঁয়ায় ভরে যায় লোকসভা। তাঁদের মুখে স্লোগান, ‘তানাশাহি নেহি চলেগি’ (স্বৈরতন্ত্র চলবে না)। স্বাভাবিকভাবেই হতবাক সবাই। সঙ্গে সঙ্গে মুলতবি করে দেওয়া হয় সভার কাজ। সংসদ ভবনের নিরাপত্তায় এত বড় ত্রুটির পরে আততায়ীদের পাশাপাশি আঙুল উঠছে বিজেপি সাংসদের দিকেও। প্রতাপ সিমহার দেওয়া সুপারিশপত্র নিয়েই সংসদে ঢুকেছিল দুই আততায়ী। এই খবর প্রকাশ্যে আসার পরই শুরু হয়েছে তোলপাড়। যে কেউই কি ঢুকতে পারেন গণতন্ত্রের মন্দিরে? যাঁর মাধ্যমে এই পাস পাওয়া যায়, কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তার জন্য কোনও দায় কি থাকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির? উঠছে প্রশ্ন।।লোকসভায় কার্যপ্রণালী এবং পরিচালনার নিয়ম অনুযায়ী, দর্শক গ্যালারিতে ঢোকার কার্ড ইস্যু করতে পারেন শুধুমাত্র কোনও সাংসদ। তাও যেদিন সেই ব্যক্তি দর্শক গ্যালারিতে ঢুকতে চান, তার আগের দিন সেন্ট্রালাইজড পাস ইস্যু সেল (সিপিআইসি) থেকে হলুদ রঙের ফর্ম পূরণ করতে হয়। নিয়ম বলছে, কোনও অপরিচিত ব্যক্তিকে দর্শক গ্যালারির পাস ইস্যু করা যায় না। শুধুমাত্র সাংসদ যাঁদের ব্যক্তিগতভাবে চেনেন, তাঁদেরই দর্শক গ্যালারির পাস দেওয়া যায়। আবেদনপত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পুরো নাম, বাবা অথবা স্বামীর পুরো নাম, বয়স, নাগরিকত্ব, বিদেশি হলে পাসপোর্ট নম্বর, পেশা, দিল্লীর ও স্থায়ী ঠিকানার সম্পূর্ণ উল্লেখ করতে হয়।
পাশাপাশি, সাংসদকে একটি শংসাপত্র দিতে হয়। লিখতে হয়, “দর্শক হিসাবে ঢুকতে চাওয়া উপরোক্ত ব্যক্তি আমার আত্মীয়/ব্যক্তিগত বন্ধু/আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তাঁর যাবতীয় দায় আমার।” কোনও সাংসদ দিনে চারজনের বেশি অতিথির জন্য পাস ইস্যু করতে পারেন না। এবং সিপিআইসি-র কাছে বিকেল চারটের আগে পৌঁছতে হবে আবেদনপত্র। দিনের দিনও অবশ্য পাস ইস্যু করানো যায় তবে শর্তসাপেক্ষে। সংসদে দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত হয় লোকসভার নিয়মের বিধি ৩৮৬ অনুযায়ী। অতিথিদের নিজেদের আইডেন্টিটি কার্ড সঙ্গে রাখতে হয়। অথচ সংসদ চত্বর থেকে ধৃত নীলম শর্মা ও অমল শিণ্ডের কাছে ছিল না কোনও আইডেন্টিটি কার্ড। পাস ইস্যুর এই প্রক্রিয়ায় চোখ বোলালেই বোঝা যাবে, ধৃত সাগর শর্মা ও ডি মনোরঞ্জনকে পাস ইস্যু করা বিজেপি সাংসদ সহজে দায় এড়িয়ে যেতে পারবেন না। সূত্রের খবর, অধ্যক্ষ ওম বিড়লার কাছে প্রতাপ সিমহা জানিয়েছেন, ধৃত মনোরঞ্জন ডি তাঁর সংসদীয় ক্ষেত্রের বাসিন্দা। মনোরঞ্জনের বাবাকে তিনি চেনেন। তিনিই প্রতাপকে অনুরোধ করেছিলেন ছেলে ও তাঁর বন্ধুর জন্য অতিথি কার্ড ইস্যু করতে। যদিও এই দু’জনের ফর্মে প্রতাপ নন, সই করেন তাঁর সহকারী। একথাও নাকি অধ্যক্ষকে জানান বিজেপি সাংসদ। এখানেই ঘনীভূত হয়েছে সংশয়। নিয়মে যেখানে স্পষ্ট করা আছে, পাস ইস্যু করতে পারেন শুধু সাংসদ। অন্য কেউ নন। তাহলে কি এই ক্ষেত্রেও মহুয়া মৈত্রের লগইন আইডি ও পাসওয়ার্ড শেয়ার করার মতো অপরাধ হয়ে গেল না? এবারও কি জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন উঠল না? প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।